প্লাস্টিকের কাপের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ তৈরি করেছেন তিনি। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গড়ে তুলেছেন কেপিসি ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কোম্পানি। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে দেশের সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা এই মানুষটি হলেন কাজী সাজেদুর রহমান। বুধবার (৪ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন সফলতার গল্প।
তেজগাঁওয়ে কেপিসির কারখানায় কথা হয় কাজী সাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ছোট পরিসরে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি। সেটা ২০০৫ সালের কথা। আর্থিক সংকটের কারণে তখন আমার কষ্টের সীমা ছিল না। ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সেখান থেকে যে টাকা আসতো, তাই দিয়ে নিজের পড়ালেখা চালিয়েছি। ওই সময় একটা কোম্পানি খুলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি। টেন্ডার ডকুমেন্ট কিনতে লেগেছিল সেই পাঁচ হাজার টাকা। মিটারের নিচে প্লাস্টিকের সিল সরবরাহ করা ছিল আমার প্রথম ব্যবসায়িক কাজ।’
কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই কিছু একটা করার চিন্তা ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ই হুয়াওয়ে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যাপারেটর্স কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন পিডিবিতে মিটার সিল সরবরাহ করেছি। এই ব্যবসায় মাত্র দুই বছরে ভালো মুনাফা হয়। তবে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনে নতুন সরকার আসার পর ওই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবসার টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করি। সেখান থেকে ভালো মুনাফা হয়। পরবর্তী সময়ে গড়ে তুলি কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। পূর্বাচলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে ২৪ শতাংশ জায়গার ওপর ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন কারখানার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে এটি উদ্বোধন হবে। বর্তমান কারখানায় দিনে ৩ লাখ ৬০ হাজার পিস কাপ উৎপাদন হয়। নতুন কারখানায় উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে হবে দৈনিক ৮ থেকে ১০ লাখ পিস।’ চলতি বছর কেপিসির জনবল বেড়ে ১০০ ছাড়িয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক মিলে কিপিসিতে ৩৮ জন লোক কাজ করছেন।
তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের একদিন বিদেশ থেকে আনা যন্ত্রপাতি বুঝে পান। ওইদিন তিনি তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেন। একই বছরের মে মাসে কেপিসির উৎপাদন শুরু হয়। এরপর শুরু হয় বিপণন কাজ।
কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘উৎপাদন শুরুর পরের মাসে পেপার কাপ নিয়ে নিজেই ছুটে যাই আমেরিকান প্রতিষ্ঠান শেভরনের কার্যালয়ে। আধঘণ্টা আলোচনার পর তারা প্রতি মাসে দুই লাখ পিস করে কাপের ক্রয়াদেশ দেয়। এরপর থেকে কাপের চাহিদা বাড়তে থাকে। কেপিসির করপোরেট গ্রাহকের তালিকায় এখন আরও যুক্ত হয়েছে প্রাণ, এসিআই, ইউনিলিভার, নেসলে, ইস্পাহানি, ইগলু, ডানো, বসুন্ধরা, অ্যাপোলো হাসপাতাল, সোনারগাঁও হোটেল, বেক্সিমকোসহ ২৮০টি প্রতিষ্ঠান। খোলা বাজারেও পেপার কাপ বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে মাসে এক কোটি ২০ লাখ কাপ বিক্রি হয়। তবে ৯০ শতাংশই ব্র্যান্ড ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে যায়।’
তিনি জানান, পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কাগজের কাপের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ কোটি টাকার পেপার কাপ বিক্রি করে কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। তার আগের অর্থবছরে তারা ৭ কোটি টাকার পেপার কাপ বিক্রি করে, যার মানে কেবল গত অর্থবছরই কেপিসির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ শতাংশ।
তিনি জানান, কেপিসি বর্তমানে ১১ ধরনের কাগজের কাপের পাশাপাশি প্লেট বা থালা ও বাটি তৈরি করছে। প্রতিটি কাপ ৮০ পয়সা থেকে ৮ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, দুই থেকে চার টাকায় প্লেট এবং তিন থেকে চার টাকায় বাটি বানিয়ে দেয় কেপিসি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পেপার কাপগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব। এই কাপ মাটিতে ফেলে দেওয়ার ২১ দিনের মধ্যে পুরোপুরি পচে গিয়ে জৈব সারে পরিণত হয়।’