ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন গ্রাহক

ব্যাংক খাতের জন্য এখন খুবই খারাপ সময়। ফারমার্স ব্যাংক ইস্যুতে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে তাদের জমানো টাকা তুলে নিচ্ছেন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত—এই তিন মাসে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে জনগণের রাখা আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তিনমাস পর অর্থাৎ মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের খারাপ অবস্থার কারণে সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। এর ফলে কিছু ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে পড়েছে। কিন্তু বাকি ব্যাংকগুলোয় পর্যাপ্ত তারল্য পড়ে রয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত তিনমাসে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আমানত তুলে নেওয়া হলেও এই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। তিনমাস পর অর্থাৎ মার্চ শেষে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকতারা বলছেন, একদিকে আমানত আসছে না, অন্যদিকে ঋণ ঠিকই বিতরণ করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য (এক্সেস লিক্যুইডিটি) ছিল ৯৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল একলাখ ২৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। অবশ্য বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় তাদের নগদ টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক। যদিও ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণপ্রবাহ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার কারণে অনেক ব্যাংক নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।