‘গ্যাস কোম্পানি স্বপ্ন দেখতেও জনগণের কাছ থেকে টাকা চাইছে’

গণশুনানিরাষ্ট্রীয় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) স্বপ্ন দেখতেও জনগণের কাছ থেকে টাকা চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। সোমবার (২৫ জুন) রাজধানীর টিসিবি অডিটরিয়ামে আরপিজিসিএল এবং পেট্রোবাংলার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেখানে শামসুল আলম এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, কোম্পানিটি এলএনজি আমদানি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তাদের অফিস করা, যানবাহন ক্রয়, জমি অধিগ্রহণসহ নানা ধরনের কাজ করবে। এসব উন্নয়ন কাজ করার জন্য তাদের অর্থের প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করা হবে এমন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এখন থেকেই প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিপরীতে টাকা বাড়িয়ে নিতে চায় তারা। কোম্পানিটি কোনও কাজ না করে আগেই ১২ ভাগ হারে বিনিয়োগের ওপর রিটার্ন হিসেব করছে; যা অন্যায্য।

শামসুল আলম বলেন, ‘ভাবখানা এমন, তারা স্বপ্ন দেখছেন। এ জন্যও আমাকে টাকা দিতে হবে। একটি কোম্পানি বিনিয়োগের আগেই কীভাবে ব্যবসা করার চিন্তা করে?’

শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মিজানুর রহমান, আব্দুল আজিজ খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শামসুল আলম বলেন, ‘এলএনজি আমদানির উছিলায় দুই দফা গ্রাহকদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে আনা গ্যাসের দাম এখনই বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে তারা।’

শুনানিতে আরপিজিসিএল জানায়, এলএনজি আমদানির বিষয়ে তারা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ৩টি আঞ্চলিক অফিস করবে। এসব অফিসের জন্য কক্সবাজারে শূন্য দশমিক ৩৫ একর ও মহেশখালীতে ২ দশমিক ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এলএনজি স্থাপনাগুলো গভীর সমুদ্রে ও প্রত্যন্ত এলাকায় হাওয়াতে যাতায়াতের জন্য সমুদ্রে চলাচল উপযোগী স্পিড বোটসহ অন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন কিনতে হবে।

কোম্পানিটি আরও জানায়, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরঙ্গ ও কৌয়ার বিল মৌজায় স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ৫০ হেক্টর জমি ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হবে।

এসব বিষয় বিবেচনায় এলএনজি আমদানি ও রি-গ্যাসিফিকেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে এলএনজি আমদানির আপ-স্ট্রিম ব্যয় হিসেবে আরপিজিসিএলকে প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ৪০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনার আবেদন করে কোম্পানিটি। শুনানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘বাপেক্স আগামী এক বছরে ১০টি কূপ খনন করবে বলে সরকার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বাপেক্সের এই ১০টি কূপ খননের লোকবল আছে কিনা তা দেখা হয়নি। আর এত দ্রুত এতগুলো কূপ খননের মাধ্যমে বাপেক্সের তরুণ প্রকৌশলীদের ওপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ১০টি কূপ খননের ক্ষেত্রে কারিগরি বিষয়টি চিন্তা করা উচিত। সময় নয়। সময় বেঁধে দিলে তাড়াহুড়া করে করা কূপে দেখা গেলো গ্যাস নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থায় বাইরে প্রচারও হতে পারে দেশে গ্যাস নেই, তাই এলএনজি আমদানি করতেই হবে।’ বদরুল ইমাম পেট্রোবাংলার কাছে জানতে চান, আগামী ২০ বছর পর এলএনজির চাহিদা কত হবে এবং সেই সময় গ্যাসের দাম কত হবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এলএনজির গ্যাস পাইপলাইনে আসার আগেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করা হয়েছে। আট বছর ধরেই এলএনজি আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দেশীয় গ্যাস খোঁজায় মনোযোগ দিলে আরও আগেই আমাদের দেশের গ্যাস পাওয়া যেতো।’

ব্যবহার শুরুর আগেই এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সবগুলো কোম্পানি সিস্টেম গেইনে আছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় করা হয়নি। অথচ তিতাস সিস্টেম লসে আছে, যা অগ্রহণযোগ্য। তা সমন্বয়ে চার্জ বাড়ানোর আবেদন অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া তিতাসের রিটার্ন হার ১৮ শতাংশ ধরা এবং ভোক্তার ওপর ডিমান্ড চার্জ আরোপ ঠিক হচ্ছে না।