‘জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন খুবই উপযুক্ত’

বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সামিট ২০১৮ এর আয়োজক ও অতিথিরা

বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ  খুবই উপযুক্ত অঞ্চল। বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছে বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

বুধবার (২৭ জুন) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সামিট ২০১৮ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চীনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডব্লিউএসপিওও-এর গ্রুপ এবং পাক্ষিক ম্যাগাজিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার যৌথভাবে এই অনুষ্ঠোনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঘাটতি মেটাতে সরকার নানা পরিকল্পনা করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থের যোগান দিতে প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর বিপুল এই বিনিয়োগে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুযোগ রয়েছে।  বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ খুবই উপযুক্ত অঞ্চল। এই ধরনের বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে প্রতিঘণ্টায় ৪৫০ কিলোওয়াট। ২০০৮ সালে দেশের মাত্র ৫০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পেতো, যা এখন ৯০ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কথা থাকলেও এই বছরের শেষের দিকেই শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে। বিদ্যুৎ বিভাগের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্মার্ট গ্রিড নির্মাণ করা জরুরি। কারণ, স্মার্ট গ্রিড না করলে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে দেশের বিভিন্ন জায়গা ভরে যাবে।’

মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের দেশে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা আছে প্রায় ৩৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে।’

এলএনজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস খুব দ্রুত পাইপলাইনে যুক্ত হবে। এ বছরের শেষে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট যুক্ত হবে।’

তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য ৫০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করছে বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ)। এ খাতে রয়েছে ইনসেনটিভ প্যাকেজ। চাইলে বিদেশিরাও এসে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে।

দু’দিনের এই সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশ বছরে ৩৪ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। এর বিপরীতে দেশে আমদানির পরিমাণ ৪৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। দুই দিনের এই জ্বালানি সম্মেলনে গত অর্থবছরের আমদানি-রফতানির এই হিসাব তুলে ধরে বলা হয়— বাংলাদেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সস্তা শ্রমের সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পাশাপাশি বিদেশিদের বিনিয়োগেরও সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে ৭৭৪ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। চীনা বিনিয়োগকারীরা এখানে শিল্প কারখানা স্থাপন করবেন। এছাড়া, জাপানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে  এক হাজার একরের একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। একইভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাগেরহাটের মংলা, চট্টগ্রামের মীরেরসরাই এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতে পৃথক তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

সম্মেলনে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।এজন্য ৮২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।