ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মেয়াদি আমানতে নির্দিষ্ট চুক্তি থাকে। ফলে এসব ব্যাংক আমানতে এখনই হাত দিতে পারবে না। তবে ব্যাংকের পর্ষদ ইচ্ছে করলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবে।’
তার মতে, আগের ঋণে নতুন সুদহার কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলেও লাগতে পারে। কেননা গত ছয় মাস ধরে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে আগের নেওয়া আমানতে সুদহারের কোনও পরিবর্তন হবে না। ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে হলে আগের চুক্তি অনুযায়ী আমানতে সুদ দিতে হবে।’
এদিকে এখন থেকে ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এর বাইরে ৬ শতাংশ সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পড়ে থাকা অলস টাকা (বিভিন্ন বন্ডে রাখা স্বল্প সুদের বিনিয়োগ) এবং বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আমানতও পাবে। এসব আমানত দিয়ে যে তহবিল গঠন হবে, সেখান থেকে নতুন গ্রাহকদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ‘সুদহার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকগুলো নিজেরা। সিঙ্গেল ডিজিটে সুদহার কমিয়ে আনতে গিয়ে যদি কোনও ব্যাংক সমস্যায় পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের যতটুকু সম্ভব সহায়তা করবে।’
জানা গেছে, এখনই সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামবে না। প্রথম পর্যায়ে সব ব্যাংক শিল্প ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করবে। পর্যায়ক্রমে ভোক্তা ঋণ, এসএমই, ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সুদহার নামিয়ে আনা হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধারণা, ব্যাংকগুলোর ৬ শতাংশ সুদে আমানত পেতে কিছুটা সময় লাগবে। আর যতদিন পর্যন্ত স্বল্প সুদে আমানত আসবে না, ততদিন ঋণ বিতরণে ছন্দপতন হতে পারে। যদিও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণ বিতরণের কারণে এমনিতেই তারা গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারছে না।
অধিকাংশ ব্যাংকের এমডির বক্তব্য হলো— ৬ শতাংশ সুদে নতুন আমানত না পাওয়া পর্যন্ত তারা হয়তো ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। যদিও সরকারি আমানত যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পেতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।
এর আগে দেশকে বিনিয়োগবান্ধব, শিল্পবান্ধব, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও রফতানি বাণিজ্যকে গতিশীল করতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গত ২০ জুন ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এ সিদ্ধান্ত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সেদিন ব্যাংক হলিডে থাকায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তবে ২ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এটি কার্যকর করেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। নগদ টাকার সংকট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোনও কোনও ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে ঋণের ক্ষেত্রেও। কোনও কোনও গ্রাহক ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধে বাধ্য হন।