অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ডিমের দাম

ডিম (সংগৃহীত ছবি)



ফার্মের মুরগির ডিম (লাল) প্রতি পিস এখন খুচরা বাজারে বেচা হচ্ছে প্রায় ৮ টাকায়। ৩০ পিসের এক খাচি ডিমের দাম ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা। এই দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রোজায় ডিমের চাহিদা কম থাকে। তাই রোজায় ডিমের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছিল। জুনের ১৬ তারিখ রোজা শেষ হয়েছে। ঈদের ছুটিও শেষ। তাই রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র চাহিদা বেড়েছে ডিমের। তাই দামও বেড়েছে।
শুক্রবার (৬ জুলাই) রাজধানীর কয়েকটি বাজারের ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে পিস প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৩ টাকা করে। অর্থাৎ হালিতে বেড়েছে ১২ থেকে ১৩ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে সবজির বাজারও মন্থর। এই মৌসুমে গুটিকয়েক সবজি পাওয়া যায়। নদ-নদীতে পানি বেশি থাকায় মাছের সরবরাহও কমে যায় এই মৌসুমে। ফলে দাম বাড়ে মাছের। সুযোগ বুঝে অধিক মুনাফার দিকে ঝুঁকে পড়েন মাংস ব্যবসায়ীরাও। গরুর মাংস ও সব ধরনের মুরগির মাসের দাম বেশি থাকায় চাপ পড়ে ডিমের ওপর। তাই চাহিদা বাড়ে ডিমের।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু ডিম বেচেন এমন ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ৯০ টাকায় বেচছেন। আর প্রতি হালি ডিমের দাম রাখা হচ্ছে ৩২ টাকা। অন্যদিকে মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিমের দাম রাখা হচ্ছে ৯ থেকে ১০ টাকা।
রাজধানীর মাতুয়াইল মুসলিম নগরের ডিম বিক্রেতা কাওসার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোজার সময় ১০০টি ডিম ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকায় কিনেছি। এখন সেই ডিম কিনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭১০ টাকায়। এই দরে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ৭ টাকা থেকে ৭ টাকা ১০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহন খরচ। পরিবহন করতে গিয়ে কিছু ডিম ভেঙেও যায়।’ তাই প্রতিপিস ডিম ৮ টাকার কমে বেচলে দোকানির লোকসান হয় বলে জানান তিনি।
কাওসার হোসেন বলেন, ‘ভেবেছিলাম আজ (৬ জুলাই শুক্রবার) ৫০০ ডিম আনবো। কিন্তু দাম বেশি বলে মাত্র দেড়শ ডিম এনেছি। দোকান তো চালাতে হবে। বেশি না আনলে পরিবহন খরচ দিয়ে পোষানো যায় না। তাই দেড়শ ডিম এনেছি।’
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বৃষ্টিতে ডিমের উৎপাদনও কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে খামারিরাও চাপে আছেন। তাই সরবরাহ কমেছে কিছুটা। একদিকে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বাড়ানোটা খুবই স্বভাবিক বলে জানান তারা। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতাদের কোনও ভূমিকা থাকে না বলেও জানান তারা।
কাওরান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী হেদায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা পাইকারি দরে ডিম কিনে আনি, আর খুচরা বেচি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারে বাড়াতে হয়। আর পাইকারি বাজারে কমলে খুচরা বাজারেও কমে। যদি বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখি কাস্টমার অন্য দোকানে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে দাম বেশি রাখার তো কোনও সুযোগ নাই।’
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ডিমের চাহিদা রয়েছে এক হাজার ৬৯৪ কোটি ১৬ লাখ পিসের। দেশে প্রতিবছর ডিম উৎপাদন হয় এক হাজার ৪৯৩ কোটি ৩১ লাখ পিস। এ হিসাব অনুসারে বছরে চাহিদার তুলনায় ২০০ কোটি ৮৫ লাখ পিস ডিমের ঘাটতি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের খামারি শাহজাহান মৃধা বেনু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বৃষ্টির মৌসুমে ডিম উৎপাদন কমে যায়। এই মৌসুমে বাজারে বা মাঠে সবজিও তেমন থাকে না। তাই মাছ ও মাংসের পাশাপাশি ডিমের ওপর চাপ পড়ে। মাছ-মংসের দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ ডিমের দিকে ঝোঁকে।
তিনি আরও জানান, ডিমের উৎপাদন খরচও বেড়েছে আগের তুলনায়। বেড়েছে শ্রমিকের পারিশ্রমিক। একই সঙ্গে বেড়েছে রোগ প্রতিরোধের ওষুধ ও মুরগি পালনের বিভিন্ন উপকরণের দাম। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে মুনাফা করতে ব্যর্থ হওয়ায় লোকসানের কবলে পড়েছেন কয়েক হাজার খামারি। একপর্যায়ে তারা এই ব্যবসাই বন্ধ করে দিয়েছেন। এই খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন শাহাজান মৃধা।
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমি এই মুহূর্তে আমার নির্বাচনি এলাকা খুলনায় রয়েছি। ডিমের দাম বৃদ্ধর বিষয়টি বিভিন্ন কাগজে দেখেছি। এই সময়ে ডিমের দাম এত বাড়ে না। তবে ঢাকায় ফিরে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। অযৌক্তিকভাবে যদি কেউ ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বা দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে সরকার।’