চীনে পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর নীতি

 

চীনে সড়কের পাশে ফুলের বাগানচীনের রাজধানী বেইজিং ও বাণিজ্যিক রাজধানী সাংহাইয়ের পথে পথে সবুজের সারি।  রাস্তায় নেই কোনো আবর্জনা। এমনকি গাড়ির কালো ধোঁয়াও নেই। শহর দু’টি ঝকঝকে তকতকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের বাস এই দুই সিটিতে। বড় বড় সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়েছে সবুজ গাছ, বাহারি ফুল। বাদ যায়নি ভেরের অলিগলি এমনকি ফ্লাইওভারের তলদেশ। কয়েকবছর ধরেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বেইজিংয়ের পরিবেশ দূষণ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির আমন্ত্রণে চীন সফর করেন দেশের প্রধান সারির সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা। তারা সরেজমিনে চীনের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন ছাড়াও বেইজিং ও সাংহাইয়ের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে দেখে আসেন।

২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনেক গণমাধ্যম জানিয়েছিল, চীনের পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি পরিবেশ পুলিশ বাহিনীও গড়ে তোলা হয়েছে। গাড়ির কালো ধোঁয়া রোধে প্রণয়ন করা হয়েছে আলাদা আইন। সঙ্গে পুরনো গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছিল। একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণকারী হাজার হাজার কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয় দেশটির সরকার। পরিবেশ দূষণকারী কারখানার ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে একটি বিশেষ হটলাইন টেলিফোন নম্বরও চালু করে চীনের পরিবেশ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ওই সময় গণমাধ্যমগুলো বলেছিল, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলেই চীনের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসছে চীন। কিন্তু বাস্তবতা এখন একেবারেই ভিন্ন। বরং দেশটিতে এখন পরিবেশবান্ধব কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

চীনের সড়ক

এ বিষয়ে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তা লি রু বলেন, ‘ঢাকা ও বেইজিংয়ের পরিবেশে যে পার্থক্য, তা এই শহরে ঢাকার কেউ এলেই টের পাবেন। চীন পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর হয়েছে। অন্তত আমাদের নদীগুলো সেই আভাসই দেয়। আমার শহরে যত সবুজ বনায়ন করা হয়েছে, বিশ্বের খুব কম শহরেই তা রয়েছে।’

চীনের ডাটাং ওভারসিস ইলেক্ট্রিক টেকনোলজি অ্যান্ড ও অ্যান্ড এম কোম্পানি লিমিটেড একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাইং ইয়াং বলেন, ‘আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই পরিবেশকে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখেই কাজ করা হয় এখানে। কোনও ক্ষেত্রে যেন ব্যত্যয় না ঘটে, সে বিষয়ে সবসময় নজরদারি করে সরকার।’

জানা  গেছে, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান হাতিয়ার। কেন্দ্রগুলো থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া মাত্রার মধ্যেই পরিবেশে কার্বন ছাড়া হয়। পরিবেশের বিষয়ে চীন এতটাই কঠোর যে, গত কয়েক বছরে পুরো চীনে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। এখনও এই কার্যক্রম চলছে। 

চীনে সড়কের দুই পাশে সারি সারি গাছ

১৬ হাজার ৮০১ দশমিক ২৫ বর্গ কিলোমিটারের শহরটির পুরোটাই সবুচে ঢাকা। সড়কের আইল্যান্ড আর পাশের ফুটপাত ঘেঁষে বাহারি ফুলের গাছ নজর কাড়ে যে কারও।  গাড়ি বলতেই সব নতুন। আর আছে বাইসাইকেল। বেইজিং শহরের বেশিরভাগ রাস্তায় আলাদা সাইকেলের লাইন রয়েছে। প্রচুর মানুষ বাইসাইকেলেই যাতায়াত করে। অন্যদিকে নির্মাণাধীন ভবনের কারণে যেন পরিবেশ দূষণ না হয়, সেজন্য পুরো এলাকাটি একটি ঘের দিয়ে রাখা হচ্ছে। 

একই চিত্র দেখা গেছে, চীনের আরেক শহর সাংহাইতে। আড়াই কোটি জনবসতির এই নগরীর কোথাও একটুও ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। ঢাকার মতো রাস্তার পাশে ময়লার বিন বা ডাস্টবিন চোখে পড়েনি। 

এদিকে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, ‘চীনের মতো বাংলাদেশ সরকারকেও পরিবেশ দূষণ রোধে ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। নয়তো আগামীতে চীনের দূষণের যে বর্ণনা শোনা যেতো, তারচেয়ে খারাপ অবস্থায় যাবে বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবেশ দূষণ রোধে বেশকিছু নীতিমালা করেছে। করেছে অনেক আইনও। কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে অনীহা। একমাত্র সরকারই পারে পরিবেশ দূষণ রোধ করে আগামী প্রজন্মের জন্য জন্য একটি সুন্দর পরিবেশসমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে।

/এমএনএইচ/