নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যে সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত করারোপন পরিহার চুক্তি বলবৎ রয়েছে, সে সকল দেশের প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তি বাংলাদেশ হতে তাদের অর্জিত অর্থ নিজ দেশে পাঠানোর সময় ব্যাংকসমূহের কাছে দ্বৈত করারোপন পরিহার চুক্তির সুবিধা দাবি করে উৎসে কর কর্তন ব্যতিরেকে/ হ্রাসকৃত হারে উৎসে কর কর্তনপূর্বক বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে থাকে। নির্দেশনায় বলা আছে, অর্থ আইন-২০১৮ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫৬তে এ বিষয়ে সংশোধন আনা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দ্বৈত কর পরিহার চুক্তির আওতায় কর সুবিধা গ্রহণের আগে এবং বিদেশে অর্থ পাঠানোর আগে ব্যাংকগুলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্স উইং থেকে সনদ গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, একই ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর যাতে দুই দফা কর দিতে না হয়, সে লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি হয়ে থাকে। ফলে একই অর্থ এক দেশ থেকে অন্য দেশের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে এরকম দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে। তবে এ চুক্তির অপব্যবহার করে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিতো।
এনবিআর ধারণা করছে, এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার সঠিক কর আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠানো হয় এনবিআরের ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্সেস বিভাগ থেকে। এনবিআর সদস্য কালিপদ হালদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের অনুমোদন ছাড়া হ্রাসকৃত হারে বা কর কর্তন ব্যতিরেকে বিদেশে অর্থ পাঠানোর এখতিয়ার ব্যাংকগুলোর নেই। দ্বৈত করারোপন পরিহার চুক্তির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে কোনও ধরণের সুবিধা দেওয়া কিংবা না দেওয়া সংক্রান্ত মতামত দেওয়ার আইনানুগ এখতিয়ার কেবল এনবিআরের। এ অবস্থায় বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি কিংবা বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশের রাজস্বের স্বার্থেই বিষয়টি কঠোর নজরদারি ও পরিবীক্ষণের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে এনবিআরের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তির আওতায় কর সুবিধা গ্রহণ পূর্বক বিদেশে অর্থ পাঠানোর আগে সব ব্যাংক যাতে এনবিআরের ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্সেস উইংয়ের সনদ গ্রহণ করে তা নিশ্চিত হতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরকে অনুরোধ জানানো হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে ৩৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে। চুক্তির আওতায় উভয় দেশই নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে করমুক্ত কিংবা হ্রাসকৃত হারে কর দেওয়ার সুবিধা পায়।