রফতানিতে আবারও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকগত জুন মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস তিন দশমিক ০৯ শতাংশ। এর আগে মার্চ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আবার অর্থবছরের শেষ মাস জুনে নির্ধারিত রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। ৩৬২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এ হিসেবে জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুনে রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই হিসেবে গত বছরের জুনের তুলনায় এই বছরের জুনে রফতানি আয় কমেছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমনও হতে পারে, কেউ কেউ রফতানি করছেন কিন্তু রফতানি আয়ের টাকা দেশে আনছেন না। মানে অর্থপাচার করছেন। আর সত্যি যদি রফতানি পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়, তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়।’ তিনি বলেন, এই বছরই নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ থেকে টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও রফতানি আয় কমে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে।

তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ রফতানি আয় বৃদ্ধিতে বরাবরের মতো বড় ধরনের অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬১ কোটি  ৪৭ লাখ ডলার, যা মোট আয়ের প্রায় সাড়ে ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় তৈরি পোশাক খাতে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, গত অর্থবছরে রফতানি আয় বাড়লেও অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি ডলার। এ হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ২ দশমিক ২২ শতাংশ। হিমায়িত খাদ্য ও জীবন্ত মাছ, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাঁচাপাট, প্রকৌশল ও বিবিধ পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম আয় হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ১৬ কোটি ডলার। অর্থবছর শেষে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এ হিসেবে বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে আয়ের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও এ খাতের বাইরে যেসব পণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়, সেসব দেশের মুদ্রাও ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়িত হয়েছে। এর ফলে পণ্যের দাম কম পাওয়া গেছে কিংবা পণ্যের রফতানির পরিমাণ কম হয়েছে।’

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএফ) বোর্ড মেম্বার ও তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ- এর সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে রফতানি কমেনি; এমনকি তৈরি পোশাক রফতানিও কমেনি। তবে  বিদেশের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় রফতানি আয় কম এসেছে। অবশ্য নির্বাচনের বছরে অসাধু অনেকেই রফতানি আয় দেশে নাও আনতে পারেন। এ কারণে রফতানি আয় কমলেও কমতে পারে।’