রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ‘কোর ক্যাচার’ স্থাপন শুরু

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘কোর ক্যাচার’ স্থাপন উদ্ধোধন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শনিবার (১৮ আগস্ট) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কোর ক্যাচার’ বা ‘মেল্ট ট্র্যাপ’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। রিয়্যাক্টরের তলদেশে স্থাপিত এই ডিভাইসটি আধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
জানা যায়, কোনও কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটলে বা তাপমাত্রা বেড়ে নিউক্লিয়ার কোর যেখানে মূল জ্বালানি রাখা হয় সে জায়গাটি গলতে শুরু করে তবে তেজস্ক্রিয়তা বাইরে চলে আসবে। কোর ক্যাচারের কারণে তেজস্ক্রিয়তা বাইরে আসতে পারে না, গলে সেটার ভেতরেই পড়তে থাকে। এটি একটি গোল কন্টেইনারের মতো। এর ওজন প্রায় ২০০ টন। সেই কোর ক্যাচারের ভেতরে আরও অনেক ধরনের পদার্থ থাকে। গলে তেজস্ক্রিয়তার সব ধরনের পদার্থ জমা হয়ে কোর ক্যাচারের ভেতরে আটকে যায়। ফলে তেজস্ক্রিয়তা বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এটি বর্তমানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।
এই প্রযুক্তির কারণে বলা হয়, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগের চেয়ে নিরাপদ। কারণ কোর ক্যাচারের ভেতরেই তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হতে থাকে, বের হতে পারে না। কোর ক্যাচার স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শওকত আকবর, রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাকটর এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট (এএসই) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ওভারসিজ প্রজেক্টস- আলেস্কান্দার খাজিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে আলেস্কান্দার খাজিন বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তায় এটি একটি অনন্য ব্যবস্থা এবং প্রায় ২০০ টন ওজনের এমন একটি বড় আকারের ডিভাইস আমরা প্রথমবারের মতো প্রকল্পের ১ নম্বর ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনে স্থাপন করছি। আগামী ৬ মাসে এটি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি আরও জানান, ইউনিট-১ এর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। বর্তমানে প্রকল্পটিতে প্রায় ৪ হাজার লোক কর্মরত রয়েছেন এবং প্রতিদিন ৫ হাজার টনের বেশি সিমেন্ট নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোর ক্যাচার সর্বপ্রথম স্থাপিত হয় রুশ নকশায় নির্মিত চীনের তিয়ানওয়ান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। কোর ক্যাচার আধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অংশ। রূপপুরে স্থাপিত হবে আধুনিক ৩+ প্রজন্মের পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ভিভিইআর ১২০০। রিয়্যাক্টরটিতে রয়েছে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনন্য সমন্বয়, যার ফলে এটি যেকোনো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিপর্যয় থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভিভিইআরে ১২০০ রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে রোসাটমের প্রকৌশল শাখা- এএসই এই প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা)।