বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত খুশি: ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক। ছবি: পিআইডি


ভারতের বাণিজ্য, শিল্প ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত খুশি। উভয় দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। উভয় দেশের সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান করা হবে। বৈঠকে আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। সমাধানের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়ে ভারত খুবই আন্তরিক। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএসটিআই-এর টেস্টিং রিপোর্ট গ্রহণ, ভোজ্যতেল রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা, নতুন বর্ডারহাট চালু, পাটপণ্য রফতানিসহ যে সব সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।
বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারতের বাণিজ্য, শিল্প ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভুর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের  এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় প্রভু বলেন, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত যুবককে কাজে লাগানোর সুযোগ এসেছে। ট্যুরিজম ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য সার্ভিস সেক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে উভয় দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি। উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে বাণিজ্য বাড়ানো হবে।
সব বাণিজ্য বাধা দূর করতে ভারত-বাংলাদেশ একমত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য, ভোজ্য তেলসহ বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধান করার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্ডার হাটের বিষয়ে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪টি বর্ডার হাট চালু আছে, আরও ৬টি বর্ডার হাট চালুর বিষয় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নাকুগাঁও এবং ভারতের ডালু সীমান্তে একটি বর্ডারহাট অল্প কিছুদিনের মধ্যে চালু করা হবে।
বিএসটিআইয়ের সনদ গ্রহণ না করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২১টি পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই-এর টেস্টিং রিপোর্ট গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ১৫টি পণ্যের রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে, অবশিষ্ট ৬টি পণ্যের রিপোর্ট গ্রহণ করতে ভারত সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৬টি পণ্যের রিপোর্ট নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ছিটমহলবাসী এখন স্বাধীন জীবনযাপন করছে। উভয় দেশের বাণিজ্য এখন ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ রফতানি করছে ৮৭৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমদানি করছে ৮ হাজার ৬১৯ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশ অনেক রফতানি পণ্যের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি ভারত থেকে আমদানি করে এবং  অনেক পণ্য দেশটিতে রফতানি করে থাকে। সেখানে বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে।  এখন ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের রফতানি বাড়ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য্য,  স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী।
অপরদিকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভুর নেতৃত্বে ভারতের প্রতিনিধি দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শিংলা, ভারতের বাণিজ্য বিভাগের যুগ্ম-সচিব ভুপিনদার বাল্লা, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেফালী জুনিগা।