যেভাবে ১৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয় নিউ জিল্যান্ড ডেইরি

নিউজিল্যান্ড ডেইরির কয়েকটি পণ্যবহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নিউ জিল্যান্ড ডেইরির বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করেছে  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআর বলছে, নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) এলটিইউ’র কমিশনার মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর সই করা কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে নিউ জিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।  

তবে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিউ জিল্যান্ড ডেইরি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোলার রফিকুল ইসলাম মল্লিক।

বাজারে থাকা নিউ জিল্যান্ড ডেইরি ব্র্যান্ডের গুড়ো দুধগুলো হলো ডিপ্লোমা, রেড কাউ, অ্যাংকর, সেইফ আপ মিল্ক, ফার্মল্যান্ড গোল্ড ও ফার্মল্যান্ড মিল্ক পাউডার। এছাড়া রয়েছে রেড কাউ বাটারওয়েল। নন ডেইরি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ডুডলস ইন্সট্যান্ট নুডলস, ডুডলস স্টিক নুডলস, পপাস চিপ ও ডেটস চিপ।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা রূপগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত নিউ জিল্যান্ড ডেইরি প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখার ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিক্রয় তথ্য গোপন করে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। পরে অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে প্রতিষ্ঠানটির দাখিলপত্র নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় এলটিইউ। সে অনুযায়ী চলতি মাসের ২ অক্টোবর এনবিআরের কর্মকর্তারা নিউজিল্যান্ড ডেইরির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার থেকে বিক্রয় বিবরণী ও দলিলাদি নিয়ে আসা হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, বিক্রয় বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়- প্রতিষ্ঠানি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছে। অথচ তাদের মাসিক দাখিলপত্রে বিক্রি দেখানো হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দাখিলপত্রে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা কম দেখানো হয়েছে। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

এছাড়া সফটওয়্যার থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৪৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রি দেখিয়েছে প্রায় ৪৮৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সফটওয়্যারের চেয়ে দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য গোপন করা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় তথ্য গোপন করে প্রায় ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এলটিইউ’র এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন ও পরবর্তীতে দাখিলপত্র যাচাই করে ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। আমরা আরও ফাঁকি উদঘাটনের চেষ্টা করছি। ফাঁকির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।’

এনবিআর আরও জানায়, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ রেয়াত নেওয়া এবং ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুড়ো দুধ সরবরাহ করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করে এলটিইউ।