নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নেই মেঘনা ইন্স্যুরেন্স!

শেখ আবদুল কাদের

বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়ন্ত্রণে নেই মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির  সাবেক এক কর্মকর্তার বেতনের পৌনে দুই কোটি টাকা আটকে রেখেছে।

এই পরিমাণ টাকা উদ্ধারের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ডিএমডি (উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক) শেখ আবদুল কাদের আইডিআরএ’র শরণাপন্ন হয়েছেন। আইডিআরএ গত ১৩ সেপ্টেম্বর মেঘনা ইন্স্যুরেন্সকে সাত দিন সময় বেঁধে দিয়ে শেখ আব্দুল কাদেরের পাওনা নির্ধারণপূর্বক পরিশোধের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশনা মানছে না কোম্পানিটি।

এ প্রসঙ্গে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (আইন) বিচারপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। মেঘনা ইন্স্যুরেন্স যদি আমাদের নির্দেশনা না মানে, তাহলে শেখ আবদুল কাদের সাহেবের উচিত হবে এখন ওই ইন্সুরেন্সের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা। আর এটাই এখন একমাত্র পথ।’

এদিকে, ৮২ বছর বয়সী শেখ আব্দুল কাদের পাওনা আদায়ের জন্য মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ আব্দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে মূল বেতন ভাতা ও বোনাসসহ তার পাওনা দাঁড়িয়েছে এককোটি ৭২ লাখ টাকা।

এর আগে গত ১১ মার্চ আইডিআরএ’র কাছে পাঠানো এক চিঠিতে শেখ আবদুল কাদের জানিয়েছেন, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে মূল বেতন ভাতাদি ও  বোনাসসহ তার পাওনা প্রায় এককোটি ২৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর সঙ্গে সুদসহ পাওনা দাঁড়িয়েছে এককোটি ৭২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি ক্রমাগত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন কোম্পানিকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তার পাওনা টাকা পরিশোধ না করে আকস্মিকভাবে ২০১৬ সালে তাকে একতরফাভাবে অব্যাহতি দেয়।

গত ১১ মার্চের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে আইডিআরএ মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে শেখ আবদুল কাদেরের পাওনা নির্ধারণপূর্বক সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইডিআরএ সদস্য (আইন) বোরহান উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শেখ আবদুল কাদের হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও এম. ফারুকের দ্বৈত বেঞ্চ চার সপ্তাহের মধ্যে তার বেতন পরিশোধ করে আদালতকে জানানোর জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।এরপর আইডিআরএ মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে কয়েকদফা পাওনা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেয়।

এ প্রসঙ্গে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।

মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম সারোয়ার জাহান জামিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এককোটি টাকা একজন পাবে, অথচ সে বছরের পর বছর বসে থাকবে, এটা কখনও সম্ভব নয়। আর ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে চাকরি করে এককোটি টাকা পাওয়ারও সুযোগ নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, কাদের সাহেব কোম্পানির কাছে এককোটি টাকা পাবেন, এর ভিত্তি কী? উনার কাছে লিখিত কোনও ডকুমেন্ট কি আছে?’

শেখ আবদুল কাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাওনা আদায়ে কয়েকবার মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকগুলোতে আমি প্রয়োজনীয় দলিল বা কাগজপত্র তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই আমি টাকা দাবি করছি। এখানে মনগড়া বা সাজানো কিছুই নেই।’ 

জানা গেছে, শেখ আব্দুল কাদের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স থেকে ২০১২ সালের মেঘনা জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে যোগ দেন। তখন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সর্বসাকুল্যে তার বেতন ধরা হয় ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। যোগদানের প্রথম মাস থেকেই তিনি কোম্পানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে আসছেন। তার নিট প্রিমিয়ামের মাসিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ১০ হাজার। যোগদানের প্রথম মাসেই তিনি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৩ টাকা প্রিমিয়াম জমা করেন। কিন্তু বিমার নিয়মে পাওনা থাকলেও প্রায় প্রতিমাসে এভাবে তার অর্জিত অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের বর্ধিত আয় তাকে দেওয়া হয়নি। মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার তিন বছর ১১ মাস চাকরিকালে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম জমার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তিনি জমা করেন ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকার প্রিমিয়াম।