শনিবার ‘স্বপ্নের ঠিকানা’য় প্রধানমন্ত্রী

মাহফুজা বেগম। চল্লিশের কোঠা পেরনো এক মা। এই বয়সে অজপাড়াগাঁয়ের এক মা যেমনটি ভাবেন, মাহফুজা বেগমও তাই। একটি চাকরি দরকার তার ছেলেটির জন্য। তার আগে ছেলেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু উপায়টি কী! এতদিন প্রতিবন্ধকতা ছিল। আজ দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। কষ্টের অবসান আর সুখের হাতছানি এখন মাহফুজার মতো হাজারো মায়ের সামনে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করতে চান, তারপর এই কেন্দ্রেই একটি চাকরি চান তিনি।





সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর আবাসন প্রকল্প উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী শনিবার (২৭ অক্টোবর)। সেদিনই বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান শুরু হবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’য়। সেসময় ১৩০ পরিবারের হাতে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’য় চাবি তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে অন্য বাংলাদশের পথচলা শুরু হতে যাচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পর জন্য ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষজনকে আবারও ঘর-বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই মানুষগুলোর সবার চাওয়া একটি- একটি কাজও চান তারা।

এ ব্যাপারে মাহফুজা বেগম জানান, তাদের ব্যবসার জন্য দোকান ছিল। প্রতিদিনের আয়েই দিন চলতো। কিন্তু এখানে জমি অধিগ্রহণের পর সেই ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। অন্য জায়গাতে উঠে গিয়ে আর ব্যবসাটা করা যায়নি। এখন দিন চলতে কষ্টই হয়। তাই মাহফুজা বললেন, ‘এখানে যে স্কুল গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে ছেলেটিকে ভর্তি করাতে চাই। এরপর লেখাপড়া শেষ হলো তো তারা  এখানে চাকরি দেবেই বলছে।’  

মাহফুজার মতো একই কথা শোনালেন ওলিউর রহমানও। তিনিও জানান, প্রতি পরিবারের একজনের জন্য একটি করে কাজ চাই আমরা। এখন আমাদের এই একটিই দাবি।

মাহফুজা-ওলিউরমহ এখানকার মানুষদের কাছ থেকে সরকার ২০১৫ সালে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। বিনিময়ে তাদের ঘরবাড়ি আর জমির টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যদিও কারও কারও জমির মালিকানার দ্বন্দ্বের কারণে টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। এত দিনের নিয়ম অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ দিয়েই এসব মানুষদের বিদায় করা হতো। কিন্তু পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রম উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ১৩০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে আবারও ফিরিয়ে আনার জন্য ৪৮ বিঘা জমিতে একটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে সরকার। আবাসন প্রকল্পটি শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পটুয়াখালির কলাপাড়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

আবাসন প্রকল্পে দুটি ডিজাইনে করা হয়েছে এই সেমি-পাকা ঘরগুলো। যেসব পরিবারের ২০ শতকের বেশি জমির বসতি নষ্ট হয়েছে, তাদের জন্য সাড়ে সাত শতক জমিতে ১২শ’ বর্গফুট আয়তনের ৮২টি ঘর এবং যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তাদের জন্য সাড়ে পাঁচ শতক জমিতে এক হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪৮টি ঘর করা হয়েছে। সব ঘর এল-টাইপের। দখিনমুখী। এই ঘরের প্রত্যেকটিতে ১৫ দশমিক ৭ ফুট আয়তনে বাথরুমসহ একটি মাস্টার বেডরুম ছাড়াও আরও দুইটি ১৫ ফুট আয়তনের বেডরুম রয়েছে। সাথে থাকছে ১০ দশমিক ৪ ফুট আয়তনের একটি ডাইনিংরুম, ১২ দশমিক ২ ফুটের রান্নাঘর। এছাড়া একটি কমন বাথরুম রয়েছে। সামনের বরান্দা লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরের সামনে একটি খালি জায়গা থাকছে, যেখানে শাক-সবজির আবাদ কিংবা গবাদিপশুসহ হাঁস-মুরগি পালনের সুযোগ থাকছে। পুনর্বাসন পল্লিতে ৩৬ হাজার ৯২৯ এবং ২৪ হাজার ৫৫৪ বর্গফুট আয়তনের দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। যার উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে। পাশে রাখা হয়েছে বেঞ্চ। এই পল্লিতে নিরাপদ পানির জন্য ৪৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আধুনিক দ্বিতল মসজিদের কাজও শেষ হয়েছে। ২৩ শতক জমিতে করা হয়েছে মসজিদটি। দ্বিতল কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এর নিচতলায় থাকবে ক্লিনিক। রাখা হয়েছে খেলার মাঠ। চারটি দোকান করার মতো স্পেস নিয়ে একটি শপিং সেন্টার করা হয়েছে। রয়েছে ঈদগাঁ মাঠ। একটি স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ।

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘এখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য আমরা যে স্কুলটি নির্মাণ করেছি, সেখানে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হবে। তাদের পাঁচটি ভাষা শেখানো হবে। যাতে করে দেশের চাহিদা পূরণ হলে ওই শিক্ষার্থী দেশের বাইরে কোথাও কাজ পায়।’

স্থানীয়দের কাজ দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে কারিগরিভাবে দক্ষ লোক প্রয়োজন। এরপরও কারও যোগ্যতা থাকলে আমরা বিবেচনা করবো।’