নগরবাসীকে আরও দশদিন ভোগাবে গ্যাস!

সাগরের নিচে পাইপলাইনের সমস্যার কারণে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এরফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাশাপাশি রাজধানীতেও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, আজিমপুর, পান্থপথ, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুরসহ পুরনো ঢাকায় দিনের বেলা গ্যাসের চাপ এত কম যে, রান্নাই করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু করতে আরও প্রায় ১০দিন সময় লাগতে পারে। এরফলে  এই দশদিন রাজধানীতে আবাসিক ও শিল্পে গ্যাস সংকট থাকবে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ শুরু হলে ভোগান্তি কমে আসতে পারে  বলে  সংশ্লিষ্টরা জানান।

এলএনজি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড (আরপিজিসিএল) সূত্র জানায়, ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক বাল্বটি অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে পাইপলাইনে গ্যাস আসছে না।

এ বিষয়ে আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ ১৫ তারিখের দিকে ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অকার্যকর হয়ে যাওয়া হাইড্রোলিক বাল্বটি ৪০ মিটার পানির নিচে পাইপলাইনের মধ্যে আছে। অভিজ্ঞ লোক ছাড়া মেরামত সম্ভব নয়। তাই এই কাজের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যারা এখন মহেশখালীতে কাজ করছেন, তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।তাদের ডুবুরি আছে।এই ধরনের কাজের জন্য বিশেষায়িত জাহাজ প্রয়োজন।সেটিও এখন মহেশখালীতে আছে।’

ত্রুটির বিষয়ে প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘পাইপলাইনের ভেতরে খোলা-বন্ধের যে জায়গাটি, সেখানে হাইড্রোলিক ফ্লুয়িড থাকে। ফ্লুয়িড বের হয়ে গেছে।এ কারণেই বাল্বটি কাজ করছে না।এমনিতে পাইপলাইনে কোনও সমস্যা নেই। কাজ খুব বেশি নয়। মাটির ওপরে থাকলে আধা ঘণ্টায়ই শেষ করা সম্ভব ছিল।কিন্তু সাগরের নিচে হওয়ায় সময় একটু বেশি লাগবে।এছাড়া আবহাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে।’ সবমিলিয় আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনও কারণে এই বিশেষজ্ঞ দলটি এই মেরামতের কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনতে হবে।  ব্যাকঅাপ হিসেবে সিঙ্গাপুর থেকে একটা টিম অানার কথা হচ্ছে। তবে,  সেক্ষেত্রে সময় আরও বেশি লাগতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে গত ১৮ আগস্ট থেকে পাইপলাইনে এলএনজির বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু হয়। এর আড়াই মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো গত শনিবার (৩ নভেম্বর) পাইপলাইনের নতুন করে এই ত্রুটি দেখা দেয়। এতে জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।

এর আগেও পাইপলাইনের মধ্যেকার বিশেষ সংযোগে ত্রুটির কারণে বার বার তারিখ নির্ধারণ করার পরও গ্যাস সরবরাহ শুরু করা যায়নি।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কোটি ঘনফুট।এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর এই চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছিল।এখন তা আবার কমে ২৭০ কোটি ঘনফুটে নেমেছে।প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে তিতাস, যা স্বাভাবিক সরবরাহের প্রায় ৯ শতাংশ কম।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এলএনজির কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে তা খুব বেশি নয়। আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। বিদ্যুতে সরবরাহ কমিয়ে অন্য খাতগুলোয় সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘দুই ধরনের জ্বালানি দিয়ে (ডুয়েল ফুয়েল) যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হয়, সেখানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই গ্যাসটুকু অন্য খাতগুলোয় দেওয়া হচ্ছে।’

বর্তমানে তিতাস দেশের মোট ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সরবরাহ করে। এরমধ্যে বর্তমানে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

তিতাস সূত্র জানায়, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। তবে বেশি সমস্যা হচ্ছে ঢাকায় বাসাবাড়িগুলোয়।