জমি পাওয়ার পরও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি খাতে!

পিডিবিসৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি পেয়েও বেসরকরি খাতকে (আইপিপি) ছেড়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জমির অভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন  জমি পাওয়ার পর বলছে, নির্মাণব্যয়ের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনও দাতা সংস্থা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে  অর্থায়ন করছে না। তবে, পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের এই ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরআগেও ভোলায় গ্যাস নেই এমন ধারণা করে পিডিবি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আইপিপিতে ছেড়ে দেয়। বেসরকারি ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরপরই বাপেক্স ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রর তুলনামূলক দর বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের চেয়ে কম। সঙ্গত কারণে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয়।

পিডিবির আগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। আবার বিকল্প উপায়ে ইসিএ ফিন্যান্সিংয়ের (কাজ পাওয়া ঠিকাদারের মাধ্যমে অর্থায়ন)  মাধ্যমেও অর্থ সংস্থান করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে পিডিবি বলছে,  তারা রাঙ্গুনিয়া ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে পারছে না। রাঙ্গুনিয়ার জমির জন্য ১৭৪ কোটি টাকা জেলা প্রশাসককে পরিশোধও করেছে পিডিবি। এরপর পিডিবিকে জমিও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমি পেয়ে তা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে লিজ দিতে চাইছে পিডিবি।

পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, সৌর বিদ্যুতের জন্য সব চেয়ে বেশি কঠিন হলো জমি পাওয়া। কোনও এলাকায় এককভাবে এত বড় জমি পাওয়া খুব কষ্টের। জমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে আড়াই থেকে তিন বছর ব্যয় হয়েছে। পিডিবি নিজে না করলেও সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো জমি খুঁজছে। তাদেরও জমিগুলো দেওয়া যেতো বলে মনে করেন তিনি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এজন্য দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর বেসরকারি কোম্পানি আইপিপি হিসেবে সেখানে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি কোম্পানি জমি লিজ দেবে পিডিবি।

কেন জমি কেনার পরও এই কেন্দ্র বেসরকারিখাত দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে পিডিবির নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘অর্থায়ন সংকটের কারণে কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা যাচ্ছে  না। তাই জমি লিজ দিয়ে বেসরকারিখাতের কাছে কেন্দ্র স্থাপনের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

লিজ কীভাবে দেয়া হবে, জানতে চাইলে নাজমুল হক বলেন, ‘জমি লিজ প্রদান কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আলোচনা করেই লিজমূল্য চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য প্রকল্পটি আইপিপিসেলে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এর বাইরেও পিডিবি গঙ্গাচড়ায় ৫৫ মেগাওয়াট ও সোনাগাজিতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জমির দরও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এই দুই প্রকল্পের ভাগ্যে কী আছে, তা বলা কঠিন। কারণ পিডিবি বলছে, সরকারের দিক থেকে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে আইপিপিতে যাওয়া ভালো। গঙ্গাচড়ায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে জমি প্রয়োজন হবে প্রায় ২০০ একর। এরইমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমি বাবদ ৩৫ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে পিডিবি।

এদিকে, সোনাগাজিতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ৩৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জমি বাবদ দাম ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। এই টাকা জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছে পিডিবি।