বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে ক্যাবের ‘ফর্মুলা’





বিদ্যুতের লাইন (ছবি- সংগৃহীত)নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে নির্বাচনের পর আবার এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি করায় দীর্ঘ সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করেও পারা যাবে না। গ্যাসের দাম বাড়ালে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের দরও বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু আটটি উদ্যোগ নিলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—ক্যাব। ক্যাবের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘নতুন সরকার এসেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করবে। এতে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। কিন্তু কীভাবে এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাই আমরা বলার চেষ্টা করেছি।’
এ মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের শুরুতে ক্যাব বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবে জানিয়ে শামসুল আলম আরও বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় যৌক্তিক করার সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছি, যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে আসে। উন্নয়নের সঙ্গে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় কীভাবে, তাও সরকারের মাথায় রাখতে হবে।’
ক্যাবের সুপারিশ:
রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি বাতিল করতে হবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাস সরকারি প্ল্যান্টে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাতে উৎপাদন বাড়বে এবং ব্যয় কমবে।
ব্যক্তি খাতের সব বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি রিভিউ করে বিদ্যুৎ ক্রয়মূল্য যৌক্তিক করতে হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন বাতিল করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেসব কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে বিক্রি করা হয়েছে সেসব শেয়ার সরকারি মালিকানায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকার ‘মুনাফাখোর’ হতে পারে না। তাই সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব কোম্পানি ‘কস্ট প্লাস’-এর পরিবর্তে ‘নো লস, নো প্রফিট’ পলিসিতে পরিচালিত হতে হবে।
ক্যাবের সুপারিশ ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। তিন এবং পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবার চুক্তি নবায়ন করা হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রই বেশি দরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সরকারের মধ্য মেয়াদে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সঙ্গত কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ব্যর্থতা মেটাতে হচ্ছে বেশি দরের বিদ্যুৎ দিয়ে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আঘাত থেকে প্রান্তিক গ্রাহকদের রক্ষা করতেও ক্যাব কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না।
সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে অফগ্রিড এলাকায় সরকারি অনুদানে সোলার মিনি, মাইক্রো ও ন্যনো গ্রিড বিদ্যুৎ এবং সোলার ব্যাটারি বিদ্যুৎ কম দামে দিতে হবে।
গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে গ্রিড সম্প্রসারণ করে গ্রিড বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি করায় বিদ্যুৎ সংকট কমছে না। অথচ বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি বাড়ছে। বর্তমানে ঘাটতি ৮ হাজার কোটি টাকা। গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে মাগরিব থেকে এশার নামাজ পর্যন্ত লোডশেডিং করা যাবে না।
সরকারের তরফে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সারাদেশে লোডশেডিংমুক্ত হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও বলা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে সরকারকে আরও সময় দিতে হবে। একদিকে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই, অন্যদিকে বাড়তি দরের বোঝা বইতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্যাবের সুপারিশ আমলে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হলে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।