প্রস্তুতিতেই আটকে আছে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহের কাজ

এলএনজি ট্যাংক (ছবি-সংগৃহীত)সব প্রস্ততি শেষ করেও জাতীয় গ্রিডে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএল বলছে, এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কথা বলতে পারবে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিসিএল)। আর আরপিজিসিএল বলছে, কবে নাগাদ জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হবে, তা বলতে পারবে জিটিসিএল। দুই প্রতিষ্ঠানের দুই রকম বক্তব্যে আদৌ এই বছর জাতীয় গ্রিডে এলএনজি আসবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। শীতে ঢাকার তীব্র গ্যাস সংকটে এলএনজিকে শেষ ভরসা মনে করা হলেও সেই আশা পূরণ হচ্ছে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহেশখালীতে অবস্থিত এক্সিলারেটের জাহাজে যে পরিমাণ এলএনজি মজুদ আছে, তা দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।জাহাজে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় এরচেয়ে বেশি গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করতে পারছে না আরপিজিসিএল।

আগামী ১৪ ডিসেম্বর কাতার থেকে এলএনজি ভর্তি একটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। তবে, ওই জাহাজ এলেই যে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি আরপিজিসিএল বা জিটিসিএল—কোনও প্রতিষ্ঠানই।

জিটিসিএল জানায়, এলএনজি গ্রিডে আনতে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন নির্মাণ শেষ করে কমিশনিং করে রাখা হয়েছে।এই প্রকল্পের পরিচালক জিটিসিএল-এর কর্মকর্তা সুশীল কুমার সরকার জানান, ‘আমাদের কাজ ছিল এলএনজি জাতীয় গ্রিডে আনার ব্যবস্থা করা।আমরা সেই কাজ শেষ করে কমিশনিং করে চলে এসেছি। সরবরাহের দায়িত্ব আরপিজিসিএলের।তারা আমাদের জানিয়েছে, এই মাসের ১৪ তারিখ অথবা ১৫ ডিসেম্বরের পর এলএনজি আসবে বাংলাদেশে। তবে কবে সেই গ্যাস গ্রিডে দেবে, তা ঠিক করে বলেনি।’ তিনি জানান, ‘এখন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে সরবরাহ করা হলেও কাতার থেকে গ্যাস এলে আগামীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে সবররাহ করা যাবে।’ এলএনজি সরবরাহের বিষয়টি এখন আর জিটিসিএল-এর হাতে নেই বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে, আরপিজিসিএল এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাতার থেকে নতুন করে এলএনজি নিয়ে জাহাজ আসবে ১৪ তারিখ।তবে এলএনজি আসলেই জাতীয় গ্রিডে তা সরবরাহ করা হবে কিনা, সেই নিশ্চয়তা নেই। বিষয়টি জিটিসিএল বলতে পারবে। আরপিজিসিলের কথা বলছে জিটিসিএল। এই পরিস্থিতিতে আসলে কী হচ্ছে জানতে চাইলে, তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আসলে এলএনজি আমদানি হচ্ছে কাতার থেকে। আমরা চাইলেই সবসময় সব কিছু হয় না।তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ এপ্রিল এলএনজির ভাসমান টার্মিনালটি কাতার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে এক্সিলারেট এনার্জি।এরপর গত ১৮ আগস্ট প্রথমবারের মতো এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হয়।তবে পাইপলাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত শুধু চট্টগ্রামেই এই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।জাতীয় গ্রিডে গ্যাস আনতে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন প্রকল্প হাত নেওয়া হয়। গত অক্টোবরের শেষে এই পাইপলাইনটির সঙ্গে কর্ণফুলী নদী অতিক্রমের কাজও শেষ হয়।তবে, এরমধ্যে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে একদিন সামান্য পরিমাণ সরবরাহ করে পাইপলাইন কমিশনিং করে রাখা হলেও পরে জাতীয় গ্রিডে আর এলএনজি আসেনি।

জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু এখন ৩০০ মিলিয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সরবরাহ।