মহেশখালী-মাতারবাড়ী পাওয়ার হাবে চলছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ

বিদ্যুৎ

মহেশখালী-মাতারবাড়ী ১০ হাজার মেগাওয়াটের পাওয়ার হাবে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ীতে  হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। প্রকল্পের অধীনে কয়লা আনলোড (খালাস) করার জন্য সাত কিলোমিটারের একটি চ্যানেলও তৈরি করা হবে। ভবিষ্যতে এই চ্যানেলের পাশেই একটি কোল টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ওই টার্মিনালে দৈনিক ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা খালাসের অবকাঠামো থাকবে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে এক হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াও ওই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য ১৯৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র (জাইকা) অর্থায়নে। এজন্য জাইকা ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে জাপানের প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া, কেন্দ্রটির তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিটের অর্থায়নের বিষয়ে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাওয়ার ব্লক ও কোল স্টোরেজ এলাকায় তিন মিটার পর্যন্ত ভূমি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন অফিস ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সিমেন্ট স্টোরেজ ও পরিবহন জেটি নির্মাণ করার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চ্যানেল ড্রেজিং চলছে। মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে অস্থায়ী চ্যানেল ড্রেজিং কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জানান, আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কেন্দ্রটি ২০২৪ সালের জুনে উৎপাদনে আসবে।

অন্যদিকে, মহেশখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য জমির দাম, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জমি বাবদ অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। এ বছরের ৬ মে ঢাকায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চীনের কোম্পানি হুদিয়ান হংকংয়ের (সিএইচডিএইচকে) সঙ্গে যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠনে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চীনা কোম্পানিটির সঙ্গে ২০১২ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করে পিডিবি। এর ছয় বছর পর যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করা হলো। কেন্দ্রটিতে সমান মালিকানা থাকবে চীন এবং বাংলাদেশি কোম্পানির হাতে। এই কেন্দ্রের জন্য ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ী পাওয়ার হাব-এ অন্য কেন্দ্রগুলোর কী অবস্থা, জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বড় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থায়ন একটি জটিল বিষয়। সরকার চেষ্টা করছে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করতে। যে দেশের সরকার রাজি হচ্ছে কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ ওই দেশ থেকে ঋণ হিসেবে আনা হচ্ছে। এখানে আমাদের একক আগ্রহে কিছু হচ্ছে না বা হওয়া সম্ভবও না। দুই দেশের সরকারকে একমত হতে কিছুটা সময় তো দিতেই হবে। তবে তিনি আশা করেন— দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে মহেশখালী হয়ে উঠবে দেশের সব থেকে বড় পাওয়ার হাব। এখানে কয়লার পাশাপাশি আমদানি করা গ্যাস এলএনজি’ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।