বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ভারত ‘বিদ্যুৎ আমদানি বা রফতানি (ক্রস বর্ডার) নির্দেশিকা-২০১৮’ গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে। নতুন এ নির্দেশিকা অনুমোদিত হওয়ায় ভারত হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতকে ‘আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বিনিময় নির্দেশিকা ২০১৬’-এর একটি ধারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। ওই নীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে হলে তাদের দেশের কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করার শর্ত দেওয়া ছিল। ফলে দ্বিপাক্ষিকভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর চুক্তি করা সম্ভব ছিল না।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘আগে মনে করা হয়েছিল, ভারত এক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি অবলম্বন করছে। তবে এই নীতির পরিবর্তন করে তারা উদারতার পরিচয় দিয়েছে। এজন্য ভারতকে সাধুবাদ জানাতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে নেপাল, ভুটানের সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ আনতে পারবো। এক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছে তারা।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ভারতের ‘ক্রস বর্ডার ট্রেড অব ইলেক্ট্রিসিটি’ ( ৫ ডিসেম্বর ২০১৬)-এর নির্দেশিকার ৩.১ ধারায় বলা ছিল, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যেকোনও ক্রস বর্ডার লেনদেন ভারতীয় সত্তা (ইণ্ডিয়ান এনটিটি)/সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের কোনও সত্তা/সংস্থার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে অনুমোদিত হবে, যা দেশগুলোর মধ্যে সামগ্রিক কাঠামোর অধীনে চুক্তি দ্বারা স্বাক্ষরিত। কিন্তু সম্প্রতি সংশোধন করে প্রকাশিত নির্দেশিকার বলা হয়েছে, দু’টি আলাদা দেশ নিজেদের মধ্যেও বিদ্যুৎ কেনাবেচা করতে পারবে। যেখানে ভারত ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে তাতে অংশগ্রহণ বা অনুমোদন করবে ।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গতবছর ভারত প্রতিবেশী দেশ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষিধ আরোপ করে নীতিমালাটি করে।
নীতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দুই দেশ বিদ্যুৎ বিনিময় করতে চাইলে সেই কেন্দ্রে ভারতের সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির অংশিদারিত্ব থাকতে হবে। একইভাবে ভারতের কোম্পানিকে সঞ্চালনের দায়িত্ব দিতে হবে। ভারতের এই নীতির কারণে নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি এতদিন ঝুলে ছিল।এজন্য ভুটানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হলেও সই করা যাচ্ছিল না। নেপালের সঙ্গে চুক্তি হলে কাজ এগুচ্ছিল না।
নেপাল থেকে জলবিদ্যুতের বিষয়ে ২০১৮ সালের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এরপর গত ৩ ও ৪ ডিসেম্বর নেপালের সঙ্গে গঠিত প্রথম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ও জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভা কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। এখন ভারতের এই উদ্যেগের কারণে নেপালের বিদ্যুৎ পাওয়া সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ভারত থেকে ইতোমধ্যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে । আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ।
নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমান বিদ্যু উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।