বীমা শিল্পের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ নিলো আইডিআরএ

idraবাংলাদেশে বীমা শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও এর বিকাশ আর উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্বচ্ছতা ও আস্থার অভাব। এ কারণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়েও দেশের আপামর গণমানুষের মধ্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি বীমা। সংকট নিরসনে এই শিল্পের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাইজেশনের উদ্যোগ নিলো বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফরম (ইউএমপি) নামে একটি কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে এসএমএসের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। গত ২৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি নির্দেশনাপত্র জারি করা হয়।
আইডিআরএ’র লক্ষ্য— বীমা গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা প্রদান, বীমা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনয়ন, এজেন্ট কর্তৃক প্রিমিয়াম আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় করা। আশা করা হচ্ছে, বীমা শিল্পে অনাস্থা কাটবে শিগগিরই। ইতোমধ্যে এই উদ্যোগকে অধিকাংশ বীমা প্রতিষ্ঠান স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বিএম ইউসুফ আলি আইডিআরএ’র উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তার বিশ্বাস— এই খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গ্রাহক পর্যায়ে আস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, ইউএমপি সফটওয়্যার ব্যবস্থায় প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি করে আলাদা স্বয়ংসম্পূর্ণ পোর্টাল প্রদান করা হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানের পলিসির তথ্য নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটের ডিজিটাইশনে থাকবে। এছাড়া লেনদেনের সেন্ট্রাল মেসেজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রত্যেক বীমা গ্রাহককে প্রিমিয়াম সংক্রান্ত নোটিফিকেশন পাঠানো হবে।
আইডিআরএ’র সদস্য ড. মোশাররফের আশা, প্রাথমিক পর্যায়ে ইউএমপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও আস্থা অনেকাংশেই প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি উপকৃত হবে।

ড. মোশাররফ জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে ইউএমপি বাস্তবায়নের জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃথকভাবে যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য কোনও ব্যয়বহন করতে হবে না। বরং বীমা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ অবকাঠামো বাবদ ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ইউএমপি বাস্তবায়নের ফলে জীবন বীমাকারীদের তামাদী পলিসির হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ফলে বীমা শিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। একইসঙ্গে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজতর হবে।

তথ্য অনুযায়ী, বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো মাঠপর্যায়ে এজেন্টদের মাধ্যমে পলিসি সংগ্রহ করে। কিন্তু অধিকাংশ বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনও তথ্য অবকাঠামো নেই। গ্রাহক পর্যায়ে কোনও তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়া না থাকায় বীমা প্রিমিয়াম জমা না হওয়া, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত, বীমা পলিসি ঝরে যাওয়া, দাবি পরিশোধ না হওয়ার জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন গ্রাহকরা। একইভাবে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম না হওয়ায় সম্ভাবনাময় খাতটিতে জনসাধারণের আগ্রহ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

জানা যায়, ইউএমপি বাস্তবায়নের ফলে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল ব্যয় করতে হবে না। ইউএমপি বাস্তকবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নিজ বিনিয়োগে কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম, প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানের আলাদা ইউএমপি পোর্টাল, ডাটাবেজ সিস্টেম, হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রপাতি স্থাপন, ডাটা সেন্টার, এসএমএস পাঠানোর খরচ ও সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করবে। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেখানে অবকাঠামো বাবদ বিপুল ব্যয় করতে হতো তা এখন ইউএমপি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান করছে। এর বিনিময়ে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পলিসিপ্রতি ৮ টাকা হারে চার্জ নেওয়া হবে। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব তথ্য আইডিআরএ’র কাছে সংরক্ষিত থাকবে।