পাইপলাইন হয়নি, এলএনজির অজুহাতে দাম বাড়াতে চায় বাখরাবাদ!

গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর আবেদনের ওপর শুনানিএপ্রিলে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আসবে এই অজুহাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু এখনও পাইপলাইনই নির্মিত হয়নি। ফলে এলএনজি আসবে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই। বরং প্রি-পেইড মিটার দিয়ে গ্যাস সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আজ বুধবার (১৩ মার্চ) বাখতাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবিত মূল্য বাড়ানোর আবেদনের শুনানিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম,  সদস্য মিজানুর রহমান,  মাহমদুউল হক ভুইয়া, রহমান মুশেদ, আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, ‘বিতরণ কোম্পানিগুলো এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা তুলে ধরছে, কিন্তু তারা সেটা পারে না। তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে। এটা কোন নীতিতে দিয়েছে তারা? তারা কি ব্যবসায়ী নীতি পরিবর্তন করেছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা বলছে, পেট্রোবাংলার নির্দেশে দিয়েছে। এপ্রিল থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে বলা হচ্ছে। কিন্তু পাইপলাইনের কাজই শেষ হয়নি।’ গ্যাস আসবে না তাই ধরে নিয়ে গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ৬০০/৭০০ টাকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আবাসিকে মিটার না দিয়ে গ্যাসখাতকে দুর্নীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে। মিটার যুক্ত গ্রাহকের ৩০০/৪০০ টাকা বিল আসে। মিটার বিহীনরা দিচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু তারা ৫০ ভাগও গ্যাস ব্যবহার করে না। এটা বন্ধ করতে হবে।’

বাংলাদেশ হাউজ অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে পারবেন না। তাহলে দাম বাড়াবেন কেন? দুর্নীতি ছাড়া গ্যাসের কোনও কাজ হয় না। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এখনই কোম্পানিগুলো লাভজনক জায়গায় আছে। দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েই আরও লাভ করতে পারবে কোম্পানিগুলো।’

সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নুর বলেন, ‘অন্য কোনও জ্বালানিকে প্রনোদনা দেওয়ার জন্য যেন সিএনজি’র দাম বাড়ানো না হয়। এতে হলে শুধু সিএনজি খাতেরই ক্ষতি হবে না, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে।’

এদিকে শুনানিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আবাসিকে এক চুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩শ’ ৫০ টাকা, দুই চুলা ৮শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪শ’ ৪০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।

অন্যদিকে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা, শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৪.০৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাখরাবাদের গ্যাস কোম্পনির পক্ষে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং জেনারেল ম্যানেজার ( অর্থ) নারায়ন চন্দ্র পাল বক্তব্য রাখেন।

এদিকে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড দেওয়ার বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ডিভিডেন্ড দিতে হয়। কারণ কোম্পানি আইনে ডিভিডেন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনটা কোম্পানি বোর্ড ডিভিডেন্ড ঠিক করে দেয়। কিন্তু এটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে না হলেও বাস্তবতা মেনে নিতে হয়।’ প্রি পেইড মিটার দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু হবে।’

তবে চলতি অর্থবছর সমাপ্তির পর প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে তিতাসের বিতরণ চার্জ বাড়ানো যৌক্তিক হবে বলে জানিয়েছে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি।