সংশ্লিষ্টরা জানান, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা যেভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিতি করেছে, ঠিক এই ঘটনাটি একটি দেশের প্রধান রফতানি খাতের মোড়ও ঘুরিয়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনার পর অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিলেও গত ছয় বছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহামান জানান, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা সংস্কারের নামে দেশীয় কারখানাগুলোর ওপর চরম নজরদারি চালায় উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোটের প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ও ইউরোপের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড। এই সংগঠন দুটির চাপে দেশের এক হাজারের বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘটনায় প্রায় চার লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এতকিছুর পরও গত ছয় বছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ অবদান রাখে এই তৈরি পোশাক খাত।
খাত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দুর্ঘটনার পর বিদেশি সংস্থাগুলোর নজরদারির মধ্যেই বিশ্বের সেরা ১০টি কারখানার মধ্যে বাংলাদেশে সাতটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলে (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত আরও প্রায় ২৮০টি গ্রিন কারখানা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
রানা প্লাজা ধসের পর এ খাতটি ঘুরে দাঁড়ালেও দুর্ঘটনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা জিএসপি আর ফেরত আসেনি।
এছাড়া আহত শ্রমিকদের অনেকেই এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। বিভিন্ন সংগঠনের হিসেব মতে দুর্ঘটনার শিকার ৫১ শতাংশ শ্রমিক এখনও কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে, যারা তাদের জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছেন। কেউবা আহত স্বামী বা স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছেন।
জানা গেছে, আহত শ্রমিকদের ২০ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণের টাকা কিস্তিতে (বারে বারে) পাওয়ায় অনেকেই সেই টাকা কাজে লাগাতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন জানান, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। তারা এখনও কোনও কারখানায় কাজ পায়নি। তারা স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। কেউ তাদের খোঁজও রাখে না। অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর শ্রমিকরা যে টাকা পয়সা পেয়েছেন তাও জীবন বাঁচাতে খরচ করে ফেলেছেন। জমা বলতে আসলে এখন আর তাদের কিছু নাই।
সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর এই সেক্টর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, কিন্তু পেয়েছিও অনেক। আজ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা অবস্থিত ভবনগুলোয় আর কোনও ঝুঁকি নেই। ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। শ্রমিকদেরও বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। এই খাতে এককভাবে রফতানি আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সরকার এই খাতের উন্নতিতে আন্তরিক অবস্থায় রয়েছে।