সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব পেশ

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। অবশ্য আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। এই হিসাবে সরকারের খসড়া বাজেটের চেয়ে অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দ্বিগুণেরও বেশি।

শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০’ তুলে ধরা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে এ ধরনের বিকল্প বাজেটের প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে এই সংগঠন। বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদসহ সমিতির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সমিতির প্রস্তাবিত মোট বাজেট ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর (ভ্যাট)। অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের যোগান আসবে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে। বাজেটটি সম্পূর্ণ বৈদেশিক ঋণমুক্ত।

তিন উৎস থেকে বছরে হতে পারে তিনটি পদ্মা সেতু:

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের নতুন ২০টি উৎস চিহ্নিত করে দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এর মধ্যে তিনটি উৎস থেকেই বছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হতে পারে ৯৫ হাজার কোটি টাকা যা দিয়ে তিনটি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব। এ বিষয়ে ড. বারকাত বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে ২০টি নতুন উৎস চিহ্নিত করেছি, যা আগে ছিল না। এর মধ্যে অর্থ পাচাররোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ কর এই তিনটি উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারেন। আর এ টাকা দিয়ে প্রতিবছর তিনটি পদ্মাসেতু করা সম্ভব।

বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না:

ড. বারকাত বলেন, সমিতির প্রস্তাবিত বাজেট অর্থায়নে কোনও বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাব অনুযায়ী বাজেটের আয় কাঠামোতে মৌলিক গুণগত রূপান্তর ঘটবে । তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

অর্থনীতি সমিতির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে। এই খাতে মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এরপর জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। অন্য খাতগুলো হলো কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, জনশৃঙ্খলা-নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারকাত প্রস্তাব করেন, অভ্যাসগত ঋণখেলাপিদের মোকাবিলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে, তাদের উদ্যোগে চালু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল, তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।