মাংসের বাজার লাগামহীন, মসলায় বেড়েছে ঝাঁজ

নিত্যপণ্যের বাজারঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে-সঙ্গে মাংসের বাজার হয়ে উঠেছে লাগামহীন। ৫২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংসে দাম রাখা হচ্ছে ৬০০ টাকা। আর রসুন ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আদাসহ সব ধরনের মসলার দাম। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গরুর মাংস ও মসলার দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়ায় বাধ্য হয়েই দামের এই ঊর্ধ্বগতি চলছে। থাকতে পারে ঈদ পর্যন্তও।   

রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাসীর মাংস, মুরগি, ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির দাম। একদিনের ব্যবধানে রাজধানীর সব বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ৭৫ টাকা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্ধারিত প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা দরে বিক্রির সিদ্ধান্তের মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্র যেন উৎসবে মেতে উঠেছেন রাজধানীর মাংস বিক্রেতারা। ২৬ রোজার (শনিবার) মধ্যরাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৫২৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির। ওই সময় শেষ হওয়া মাত্রই মাংস বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। রবিবার (২ জুন) সকাল থেকেই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। রাজধানীর প্রত্যন্ত অঞ্চল কোনাপাড়া বাজারে রোজার মাসজুড়েই ৫৬০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। সেখানে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত হারে মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়নি। শহর থেকে কিছুটা দুরে বলে সেখানে কোনও মনিটরিং টিমও যায়নি। এই সুযোগটি নিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কোনাপাড়া বাজারে রবিবার সকাল থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে খাসীর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি দরে। দেশি মুরগির দাম আকাশছোঁয়া। তাই অনেকেই দেশি মুরগির স্বাদ নিতে সোনালী জাতের মুরগি কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেখানেও বিপত্তি। এই সুযোগে দাম বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগিরও। ২২০ টাকা কেজি দরের সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী এরফান আলী বলেন, ‘ঈদের সময় বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেই হারে সরবরাহ করতে পারছেন না খামারিরা। আর যেসব খামারি মুরগি সরবরাহ করছেন, তারা এই বাড়তি চাহিদার সুযোগটি নিয়ে কিছু বাড়তি মুনাফাও করছেন।’

এদিকে, শান্তিনগর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী জানান, ‘সম্প্রতি তীব্র গরমে কিছু খামারে মুরগি মারা পড়েছে। সেই চাপ পড়েছে ঈদের বাজারে। ঈদকে সামনে রেখে সবসময়ই মুরগির চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। এছাড়া, ঈদের সময় কেজিতে ১০/২০ টাকা বাড়তি দাম তেমন কিছু না। ক্রেতারা হাসিমুখেই তা মেনে নেন বলেও মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।’  

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যবহৃত মসলার বেশিরভাগই আমদানি নির্ভর। তাই আমদানিনির্ভর মসলার বাজারনির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের ওপর। তবে এ সময় পেঁয়াজ ও রসুনের সরবরাহ ভালো থাকায় এ দু’টি মসলার দাম স্থিতিশীলই রয়েছে।’

গোলাম মাওলা বলেন, ‘ঈদের সময় বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয় এলাচি, লবঙ্গ, জিরাসহ আরও কিছু মসলার ওপর। এ জাতীয় মসলা পুরোটাই আমদানি নির্ভর। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ খেকে এসব মসলা আমদানি করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘পাইকারি লেবেলে এসব মসলার দাম তেমন বাড়েনি, তবে বাড়তি চাহিদার কারণে খুচরা পর্যায়ে এ সব মসলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২শ থেকে ৩শ টাকা।’

রাজধানীর কয়েকটি বাজার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ সময় কাচা মরিচ, লেবু, শসা, ধনে পাতা ও টমেটোর বিক্রি ও দাম—দুটোই বেড়েছে। চাহিদার কারণে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরের কাচা মরিচের দাম একলাফে ১০০ টাকায় উঠেছে। ২০ টাকা হালি দরের মাঝারি সাইজের লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে ধনে পাতার দামও। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়া ও ঈদের সময় চাহিদা তৈরি হওয়ায় অনেকটাই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটোও। প্রতি কেজি টমেটো খুচরা বাজারে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

বাজারের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাজই সারাবছর বাজার মনিটর করা। আমরা সেই কাজটি করছি।’