বিদেশিদের ব্যাপারে এটিএম বুথে ব্যাংকগুলোর রেড অ্যালার্ট জারি

এটিএম বুথে জালিয়াতিযেকোনও বিদেশি নাগরিক এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথে ঢুকলে তার ওপর নজর রাখার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্ক (রেড অ্যালার্ট) থাকার জন্য এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারির পর ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ভয়ে আছি বিদেশিদের নিয়ে। যারা কিনা আমাদের এটিএম বুথে ঢুকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে আমরা সবাই এখন এটিএম বুথে বিদেশিদের লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছি। যেকোনও বিদেশি নাগরিক এটিএম বুথে ঢুকলে তার ওপর নজর রাখার জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা কেন ব্যাংকের এটিএম বুথে প্রবেশ করবে। মুখে মাস্ক, মাথায় ক্যাপ-টুপি ও চশমাওয়ালা বিদেশিদের ব্যাপারে আমরা সর্তক থাকতে বলেছি। এটিএম বুথে লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হলেও নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে ডিজিটালের সঙ্গে ফিজিক্যাল সিস্টেমে। একই সঙ্গে আমরা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়াতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।’

এর আগে ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ব্যাংকের সব ব্যবসা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকে। এই বন্ধের সময় যাতে দুষ্টচক্র কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিদের্শনায় বলা হয়েছে, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘোষিত ছুটির দিনে ব্যাংকের সব ব্যবসা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ছুটির দিনসহ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রাতে হঠাৎ করে কর্মকর্তাদের শাখা পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে ব্যাংকের আইটি সিস্টেম, বিভিন্ন স্থাপনা ও ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পালাক্রমে তদারকির ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকের সব ব্যবসা কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছাকাছি থানা অর্থাৎ পুলিশ স্টেশন, র‌্যাব অফিস ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন যুগে প্রবেশ করায় অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি আইসিটি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির এ ধারায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে জটিল আকার ধারণ করছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইটি সম্পৃক্ত ঝুঁকি আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন যথাযথভাবে মেনে চলতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ‘দেশের অর্ধেক ব্যাংক এখনও সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। মোট ব্যাংকের ৫০ ভাগ সাইবার নিরাপত্তায় নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়্যাল (এনজিএফডব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটি স্থাপন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এই ৫০ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে।’

অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা জারির মধ্যেই একটি বিদেশি চক্র ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অভিনব প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই চক্র এটিএম বুথ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যদিও ব্যাংকের সার্ভারে কোনও তথ্য যায়নি। এই ঘটনায় ছয় বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আটকরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক। ব্যাংক কর্মকর্তারা এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে সাইবার ক্রাইম বলছেন।
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের ছুটির সময়কে বেছে নেয়। তারা সব সময়ই অভিনব প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা চুরি করার চেষ্টা করে।’
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে দুইজন বিদেশি নাগরিক তিন লাখ টাকা তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা কিছু টাকা বুথে ফেলে যায়। বিষয়টি বুথের নিরাপত্তারক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। সেখানে দুই বিদেশি নাগরিকের টাকা তোলার দৃশ্য দেখা গেলেও ব্যাংকের সার্ভারে এই টাকা উত্তোলনের কোনও হিসাব জমা পড়েনি। বিষয়টি তাদের সন্দেহ হয়। পরের দিন শনিবার দুই বিদেশি নাগরিক একই বুথে ফের টাকা তুলতে যায়। তাদের মুখে মাস্ক, মাথায় ক্যাপ এবং বেশি সময় নেওয়ার কারণে নিরাপত্তারক্ষী আশপাশের লোকজন ডেকে জড়ো করেন। বিষয়টি টের পেয়ে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে আটক ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরও ছয় জনকে আটক করা হয়।

 আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা