পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলতি বছরের এপ্রিলেই উৎপাদনে আসার কথা ছিল। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সমস্যার কারণে আসতে পারেনি। পিজিসিবি জানিয়েছে, আগামী আগস্টের মধ্যে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ করবে তারা । এতে চলতি বছরের অক্টোবরেই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসতে পারে।
অন্যদিকে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট ১ এর কোল ব্যাংকার, টিজি ডেক সাব স্ট্রাকচার, ইএসপি ও মেইন পাওয়ার হাউজের স্ট্রাকচারাল ইলেকশনের কাজ চলমান রয়েছে। ইউনিট ২ এর বয়লার ইরেকশনের কাজ চলছে। মূল পাওয়ার হাউজের পাইলিং এর কাজও শেষ হয়েছে। ৩৩০ ঘনমিটার/ঘণ্টা ক্ষমতার ব্যাচিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শেষ। বিওপি এলাকার পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বয়লার স্ট্রাকচার, পাওয়ার হাউজ ও ইএসপির নির্মাণ কাজ চলছে।সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৩৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০২১ সালের মার্চ এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা।
তবে মাতারবাড়িতে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। মাতারবাড়ি প্রকল্পের জন্য এক হাজার ২৯২ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় জেলা প্রশসাকের মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এবং সিঙ্গাপুরের কোম্পানি সেম্বকর্প ইউটিলিটিজ প্রাইভেট লিমিটেড যৌথভাবে এ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে। ইএসআইএ স্টাডি শেষ করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে এইসিওএম কাজ করছে। এদিকে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি এনজিওর মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুত করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সিপিজিসিবিএল ও জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে মাতারবাড়িতে আরও একটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রটির শুধুমাত্র ফিন্যানসিয়াল অ্যাডভাইজার নিয়োগের দরপত্র মূল্যায়ন শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। জমির ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কেপকোর সঙ্গেও জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তির আওতায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি যৌথ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে পিডিবি। ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট সমঝোতা চুক্তি সই হয়। একই বছর অক্টোবরে চূড়ান্ত চুক্তির খসড়া প্রণয়ন করে কেপকোর কাছে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের মার্চে কেপকোর প্রতিনিধিদলের অর্থায়ন ও চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এখনও এর চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। বরং সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। জেভিএ (জয়েন ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট) চূড়ান্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এছাড়া পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুকেন্দ্রটি রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং নোরিনকো চায়না যৌথভাবে স্থাপন করবে। এখনও কেন্দ্রটি স্থাপনে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। পিপিএ (বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) এবং আইএ (বাস্তবায়ন চুক্তি) সই হয়েছে। এলএলএ (ভূমি ইজারা চুক্তি) স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এখন ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, আমরা প্রতিমাসেই তাদের কাজগুলোর একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলি। নিয়মিত কাজের মনিটরিং করা হচ্ছে। যাদের কাজ সিডিউল অনুযায়ী আগাচ্ছে তাদের আমরা কাজ দ্রুত করার তাগিদ দিচ্ছি। চুক্তি করার পর কাজ না করে বসে থাকলে চুক্তি বাতিলেরও উদাহরণ আছে। আরপিসিএলের কাজ দ্রুত এগুচ্ছে। কোরিয়ার সঙ্গে সেভাবে কাজ শুরু করা যায়নি। মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জমির কাজই এখনো শেষ করা যায়নি। এগুলো একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অনেক সময় জমি এবং অর্থায়নের কারণে নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হয়।এজন্য আমরা মনিটরিং জোরদার করেছি।