এক শতাংশে সন্তুষ্ট নয় বিজিএমইএ, ৩ শতাংশ প্রণোদনা চায়



64258769_2342953139358670_611419488285360128_nবাজেটে ঘোষিত পোশাক খাতের জন্য ১ শতাংশ প্রণোদনায় সন্তুষ্ট নয় রফতানিমুখী গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। দেশের তৈরি পোশাক খাতকে প্রযুক্তিগত ও উদ্ভাবনের দিক থেকে ‘দুর্বল শিশু’ আখ্যা দিয়ে পোশাক রফতানির সব ক্ষেত্রে অন্তত ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক।
রবিবার (১৬ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসন্তুষ্টির কথা জানান।
রুবানা হক বলেন, ‘৫ শতাংশের জায়গায় অন্তত ৩ শতাংশ প্রণোদনা দিলে বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে পোশাক খাত।’ এছাড়া ডলারের দাম টাকার বিপরীতে অবমূল্যায়নের দাবি বিবেচনায় নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘ডলারপ্রতি এক টাকা অবমূল্যায়ন করলে পোশাকশিল্প বছরে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাবে। সেটি হলে পোশাক খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে।’
বাজেট ঘোষণার আগে রফতানি খাতের জন্য ডলারপ্রতি অতিরিক্ত ৫ টাকা বিনিময় হার দেওয়ার দাবি করেছিল বিজিএমইএ।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের অবস্থান তুলে ধরতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পোশাক খাত এখনও দুর্বল, যদিও দেশের অর্থনীতির সিংহভাগই টিকে আছে এই খাতের ওপর।’
রুবানা হক বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যখন যাই তখন আসলে আমাদের শিশু মনে হয়, দুর্বল শিশু। একেবারে একটা নির্জন লোকালয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্বল শিশুর মতো মনে হয়। কারণ পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, ট্রেন্ড বদলে যাচ্ছে, কনজিউমারের প্যাটার্ন বদলে গেছে। আমরা সবাই অনলাইনে শপিং করি, আপনারা সবাই জানেন আসলে এটা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে সবাই সমালোচনা করেন। সমালোচনা করতে কেউ ছাড়েন না, এটা আসলে কষ্ট লাগে। আমরা চেষ্টা করছি বদলাতে।’
‘প্রতিনিয়ত যদি আমাদের শুনতে হয় আমরা ম্যাচিউরড, এস্টাব্লিশড, আমাদের আর সাহায্য দরকার নেই, তা ঠিক নয়’ মন্তব্য করে বিজেএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিথযশা অর্থনীতিবিদরাও তাই বলেন। পোশাকে কিন্তু ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি নেই। গড়ে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। গত এক মাসে আমরা ৩০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। ঈদের আগে অনেকে মেশিন বিক্রি করে হলেও বেতন দিয়েছে।’
সামাজিক সুরক্ষা খাতে পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত না করায় হতাশা ব্যক্ত করেন বিজিএমইএ সভাপতি। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ৭০ শতাংশ খুশি বলে জানান তিনি। পোশাক খাতে আর প্রণোদনার দরকার নেই বলে অর্থনীতিদদের দেওয়া পরামর্শেরও সমালোচনা করেন রুবানা হক। কৃষির সঙ্গে পোশাক খাতের প্রণোদনার বিষয়টি তুলনা করা ঠিক নয় বলেও মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
প্রসঙ্গত, বাজেট ঘোষণার আগে রফতানি খাতের জন্য ডলারপ্রতি অতিরিক্ত ৫ টাকা বিনিময় হার দেওয়ার দাবি করেছিল বিজিএমইএ। তখন তারা বলেছিল, এই সুবিধা দিলে পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে পোশাক রফতানিতে ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সে জন্য বাজেটে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ, সহ-সভাপতি এম এম মান্নান কচিসহ সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।