ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ ধরনের সন্দেহ দেখা দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ এখনও ট্যানারি পল্লির অবকাঠামো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরির কাজ এখনও শুরুই হয়নি। এখনও তা ফেলা হচ্ছে খোলা স্থানে। এ বর্জ্যের বেশিরভাগ নির্ধারিত পুকুর ও আশপাশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। আশপাশের ডোবা ভরে গেলে বর্জ্যসহ ময়লা পানি গড়িয়ে পড়ছে পাশের ধলেশ্বরী নদীতে। পরিকল্পনা আছে- এখানকার কঠিন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের। কিন্তু পরিবেশ দেখলে ওই পরিকল্পনার কথা ভাবাও দুষ্কর। এ পরিকল্পনার কার্যকর কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এখনও। চামড়া শিল্প নগরীর সীমানা প্রাচীর ভেঙে বিষাক্ত তরল বর্জ্য নদীতে পড়া বন্ধ করতে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হলেও তা ভেদ করে তরল বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে এখনও। এছাড়া কয়েকটি ড্রেনের ময়লা পানির নির্গমন পথের সংযোগ দেওয়া হয়েছে ধলেশ্বরীতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোটা শিল্পাঞ্চলে রাস্তার অবস্থা ততটা ভালো নয়। ভাঙাচোরা, জোড়াতালি লাগানো রাস্তায় চলছে চামড়াবাহী গাড়িসহ যানবাহন। প্রকল্প এলাকার রাস্তায় মাটির পরিবর্তে বসেছে ইট। তবে সিইটিপির কাছাকাছি সড়কগুলোতে আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সাভার চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র লাল পাল বলেন, ‘সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারটির বাকি কাজ কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে। বর্তমানে সিইটিপির বেশিরভাগ কাজ চলছে। তবে বাকি কাজ শেষ করার বিষয়ে শিল্প মালিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা যদি তাদের কারখানার বর্জ্য সিইটিপিতে না পাঠায় তাহলে এটিকে পুরোপুরি চালু করা কঠিন হবে।’ তিনি জানান, সিইটিপির প্রধান ২১টি অঙ্গের সবগুলোর সিভিল কাজ প্রায় ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। চারটি মডিউলের মধ্যে সব ক’টিতে ট্রায়াল রান, পারশিয়াল অপারেশন করছে। চারটি মডিউলে স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শেষ হয়েছে।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, ‘আসলেই চামড়া খাতের অবস্থা ভালো না। সর্বত্র চামড়াজাত পণ্যের অর্ডার কমে গেছে। বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের বাজারে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। শিল্প নগরীর কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে ক্রেতারাও অসন্তুষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘চামড়া খাতের এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে, সাভারের ট্যানারি পল্লিতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শোধনাগারটিকে পুরোপুরি কার্যকর করতে না পারা। একদিকে সরকারের টাকা নষ্ট, আরেকদিকে ট্যানারি পল্লীর পাশে ধলেশ্বরী নদীও নষ্ট হচ্ছে। শুনেছি, এটিকে কার্যকর করতে কিছু মেশিনপত্র কেনা হয়েছে। তা যদি সঠিক হয় তাহলে চলতি বছরের শেষ দিকে এটিকে আংশিক চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়।’
উল্লেখ্য, শুরুতে ২০০৩ সালে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ট্যানারি হস্তান্তরের অনুদান ২৬০ কোটি ৩ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি), ডাম্পিং ইয়ার্ড, সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) ও স্লাজ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেমের (এসপিজিএস) ব্যয় ধরা হয় ৬০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন ও রাজস্ব ব্যয় ধরা হয় ২১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ব্যয়ের আর্থিক অগ্রগতির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
১৯৪ দশমিক ৪০ একক জমির ওপর স্থাপিত সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে মোট প্লটের সংখ্যা ২০৫টি। এর ওপর শিল্প ইউনিট হবে ১৫৫টি। এজন্য শিল্প মালিকদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৫৫টি প্লটের মধ্যে একটি প্লটের বিপরীতে মামলা থাকায় এ পর্যন্ত ১৫৪টি প্লট শিল্প মালিকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানার মূল ভবনের কাজ শুরু করেছেন ১৫১ জন মালিক।