সক্ষমতা বাড়ছে বেনাপোল স্থলবন্দরের, বাড়ছে পরিধিও

বেনাপোলবন্দরসরকার বেনাপোল স্থল বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে  বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের  সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে বেনাপোলের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বেনাপোল স্থলবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো ও পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেছে।  নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই সব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা বিভাগের অধীনস্ত যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ  ও আমদানি-রফতানি কাজে গতিশীলতা আনা সম্ভব হবে। এছাড়া, ভারতের সঙ্গে স্থল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ বন্দর ব্যবহারের চাহিদাও বাড়বে। সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমতাবস্থায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে (জিওবি) বাস্তবায়িত হবে। এটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৯ বোটি ৬৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আগামী ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’র (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে তা অনুমোদন করে একনেক।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থল বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী গাড়ি সংরক্ষণ সম্ভব হবে। আমদানি-রফতানির কাজে গতিশীলতা আনবে। স্থলবন্দর ও সংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন হবে। ফলে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এর জন্য বর্তমানে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিধিও বাড়ানো হবে। পুরো বন্দর এলাকা ঘিরে রাখা হবে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে। প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

পরিকল্পনা কমিশনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে ২৯ দশমিক ১০ একর। ভূমি উন্নয়ন করা হবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯৭ ঘনমিটার এলাকার। পুরো বন্দর এলাকায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হবে। থাকবে পার্কিং ইয়ার্ড বা ওপেন ইয়ার্ড। নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। টয়লেট কমপ্লেক্স থাকবে ৩টি।  বন্দরে প্রবেশের জন্য মেইন গেট, গেট হাউজ ও সিকিউরিটি সিস্টেম গড়ে তোলা হবে। বন্দর সীমানার অভ্যন্তরে ১৭ হাজার ঘনমিটার প্রশস্থ পুকুর খনন করা হবে। থাকবে চারটি ওয়াচ টাওর্য়া একটি ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম।

এ বিষয়ে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট জুলফিকার আলী খোকন বলেন, ‘বেনাপোল স্থল বন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এ বন্দরটির উন্নয়নে বাণিজ্য সম্প্রসারণ সহজ হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে। বন্দরের সীমানা বাড়লে কাজ কর্ম সহজ হবে।’ 

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর চলাচলের সুবিধা বিবেচনায় স্থাপনা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের বিষয়ে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জোর দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটির সাথে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিধায় একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বেনাপোল স্থল বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা পণ্যবাহী গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে। বন্দরের সীমানা বাড়বে।’ এতে আমদানি-রফতানি কাজে গতিশীলতা আসবে বলেও তিনি মনে করেন।