ঢাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পরামর্শক নিয়োগ, চুক্তি সই

 

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে চীনের আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে তারা। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ভবনে ডিপিডিসি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে। ফিনল্যান্ডের হিফাব এবং বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড (ইসিবিএল) যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন,‘ঢাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে এই প্রকল্প অনেক বড় সহযোগিতা করবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো যাতে শেষ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিপিডিসির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন আজ।  যদিও চুক্তি আগে হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ একটা বড় বিষয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে। যেহেতু দু’দেশের সরকারের অধীনে এই প্রকল্প  বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেহেতু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। খুব সাবধানে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের প্রতিটি কাজ করতে হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আগামী মাসের মধ্যে বিদ্যুতের লাইনের সঙ্গে ঝুলানো ইন্টারনেট ও ডিসের লাইনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার  নির্দেশ দেন ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। তিনি বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে এটি একটি বাধা। এই বাধা অপসারণ করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।’

তিনি সাবস্টেশনের নিরাপত্তা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও পরামর্শ দেন।

অনিষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিপিডিসির বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহম্মদ শফিকুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পরিবর্তনে অনেক কাজ করা হবে। বিশাল এই কাজ শেষ করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে এবং নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে আজ  এই পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হলো।’

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, চিনের সহায়তায় ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ খুব জরুরি ছিল। কারণ, এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকায় ব্যাপক কাজ হবে। এরমধ্যে

১৪টি ১৩২/৩৩/১১ কেভি এবং ২৬টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন করা, একটি মেকানাইজড ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, কাটাবনে একটি  পাওয়ার হাউজ ( স্ক্যাডা কমপ্লেক্স) করাসহ বেশ বড় বড় অনেকগুলো কাজ করা হবে। তিনি জানান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদ পাঁচ বছর। এজন্য সব মিলিয়ে খরচ হবে ৯৭ কোটি টাকা।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— ইসিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী কামাল উদ্দিন আকরাম, হিফাবের রিজিওয়াল ডিরেক্টর ন্যাথোলি ট্রানাফেল্ড।

জানা যায়, চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হলো টিবিয়ান ইলেকট্রিক এপারেটাস (টিবিইএল)।  মোট ২০ হাজার ৪৬৮ কোটি ৪ হাজার ১৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এরমধ্যে সরকার দেবে ৭ হাজার ৪৪১ কোটি ২৩৬ লাখ টাকা এবং ডিপিডিসি দেবে ১ হাজার ২৪৯ কোটি  ৭ হাজার ৬৩৫ লাখ টাকা। আর  চীন দেবে ১১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৬ হাজার ৩২৫ লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় সার্ভে করে ডিজাইন ও ড্রয়িং প্রণয়ন এবং রিভিউ করা, সার্ভে এবং ডিজাইন এর ওপর ভিত্তি করে বিল অফ কোয়ানটিটি (বিওকিউ) চূড়ান্ত করা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় নির্ধারণ,  স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত সভা আয়োজন করা, প্রকল্পের অগ্রগতি মনিটরিং করা এবং মাসিক, ত্রৈমাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রণয়ন করা, প্রকল্পের নকশা রিভিউ করা, প্রকল্পের সার্বিক কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করা, ইপিসি ঠিকাদারের জমা দেওয়া বিল যাচাই করা, প্রকল্পের কাজ বুঝে ডিপিডিসিকে সহায়তা করা এবং প্রজেক্ট কমপ্লিশন রিপোর্ট তৈরি করা।

চুক্তিতে ডিপিডিপির পক্ষে কোম্পানি সচিব আসাদুজ্জামান এবং পরামর্শক কোম্পানির পক্ষে নাথালি ট্রানাফেল্ড সই করেন।