অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া বিসিএমএ’র চিঠি একটি কূটকৌশল: প্রজ্ঞা

প্রগতির জন্য জ্ঞান এর লোগোজাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি-২০১৯ চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে অর্থমন্ত্রীকে সিগারেট কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) চিঠি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)। অর্থ মন্ত্রণালয়কে রাজস্ব ভীতি দেখিয়ে নীতিমালা ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিসিএমএ কূটকৌশল অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিসিএমএ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে লেখা চিঠিতে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি-২০১৯ (খসড়া)-এ অন্তর্ভুক্ত তামাক কোম্পানিতে সরকারি অংশীদারিত্ব বাতিল, তামাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ইলেকট্রনিক সিগারেট নিষিদ্ধকরণ, প্লেইন প্যাকেজিং চালু ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকৃতি-আয়তন বাড়ানো, সিগারেটের কর ও মূল্য বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট করারোপের মতো তামাক নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষিত পদ্ধতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত না করতে মনগড়া ব্যাখ্যা ও ভিত্তিহীন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগেও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নবিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বাধাগ্রস্ত করতে সংঘবদ্ধ মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালিয়েছিল তামাক কোম্পানিগুলো।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিসিএমএ বাংলাদেশকে সিগারেটের ওপর উচ্চ করারোপ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করলেও এদেশে সিগারেট সস্তা। পাশের দেশ ভারতে সবচেয়ে কম দামি সিগারেটের দাম বাংলাদেশের কম দামি সিগারেটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্য মতে, মিয়ানমার, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশে সস্তা ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য বৃদ্ধির কোনও বিকল্প নেই। চিঠিতে সিগারেটের কর বাড়ানোর সঙ্গে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সিগারেট প্রচলন ও রাজস্ব হারানোর যে কল্পনাপ্রসূত যুক্তি বিসিএমএ তুলে ধরেছে, তা কোনোভাবেই সঠিক নয়।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক তামাক পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ২৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম, মাত্র এক দশমিক আট শতাংশ।

এতে বলা হয়েছে, তামাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিষিদ্ধ না করার জন্য বিসিএমএ একাধিক যুক্তি তুলে ধরেছে; যার মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি অন্যতম। এটি অত্যন্ত হাস্যকর যুক্তি। আসল সত্য, ৪৯ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠীর এই দেশ এখন তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় বাজার। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ যুগে রয়েছে, অর্থাৎ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি। অথচ তামাক ব্যবহারের ফলে এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ অকাল মৃত্যু এবং উৎপাদনশীলতা হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে; যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাক ব্যবহারের কারণে এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। প্রজ্ঞা বলেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে; যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম করবে।