কারা কেনেন ‘অভিযানের মাছ’?


ইলিশ মাছচলছে মা-ইলিশ রক্ষার মৌসুম। এই মৌসুমে দেশের নদ-নদীতে মা-ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে চলছে অভিযান। এরপরও এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে ধরা পড়ে ইলিশ। এসব মাছ গ্রামে-গঞ্জে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোপনে বিক্রিও হচ্ছে। অভিযানের সময় ধরা ও বিক্রি হয় বলে নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে এই ইলিশ ‘অভিযানের মাছ’ বলে পরিচিত। এই সময়ে স্বভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কমমূল্যে বিক্রি হওয়ায় নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের অনেকেই এই মাছের অপেক্ষায় থাকেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতি বছরই অভিযানের মাছ কেনেন শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সী লুৎফা বেগম (ছদ্মনাম)। তার এক ছেলে ও চার মেয়ে। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। প্রতিবছর ‘অভিযানের মাছ’ কিনে তিনি ছেলেমেয়ের জন্য পাঠান। কিন্তু এ বছর পাঠাতে পারেননি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এ বছর অভিযানের মাছ আসেনি। তাই কেনাও হয়নি।’

জানতে চাইলে লুৎফা বেগম বলেন, ‘অপেক্ষায় আছি। অভিযানের মাছ আসা শুরু হলেই কিনে রাখবো। শুনেছি অভিযানের মাছ এ বছর বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে না। আশপাশের রাস্তার ওপরেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এবার অভিযানের মাছ কিনতে পারিনি।’

সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। এ সময় যেসব জেলেকে আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক করা হয়, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সাজা ঘোষণা করে কারাগারে পাঠানো বা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় মাদ্রাসা, এতিমখানা বা বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র বা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে এর বাইরে কখনও কখনও জব্দ করা মাছে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় অনেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরে। এসব মাছ রাতের আঁধারে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করলে তা ঠেকানো অনেকটাই কঠিন। এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে পড়ামাত্রই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সাজা দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ০৯ অক্টোবর ভোর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশের ৬টি ইলিশ অভয়ারণ্যসহ ইলিশ অধ্যুষিত নদ-নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই ২২ দিন ইলিশ পরিবহন, মজুত, সংরক্ষণ ও বিনিময়ও বন্ধ রয়েছে।

ইলিশের জন্য সরকারের ঘোষণা করা মোট ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে—ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত মোট ২৬ কিলোমিটার।