অস্থির পেঁয়াজের বাজার, বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা

টিসিবির ট্রাক সেলে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজদিনে দিনে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। তারা রীতিমতো মূল্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছেন পেঁয়াজের মূল্য। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। শুক্রবার (০১ নভেম্বর) প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি দরে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছে তারা এক ধরনের জিম্মি হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর একাধিক বাজারে ও মহল্লায় খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, গত সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকায়। এর আগের সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ২/৩টি ব্যবসায়িক গ্রুপকে দিয়ে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজের বড় চালান আনার উদ্যোগ নিলেও সেই চালান এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। ওই পেঁয়াজ দেশে আসতে আরও তিন/চারদিন সময় লাগতে পারে। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, বড় চালানের পেঁয়াজ আসছে। এছাড়া নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে মাঠ থেকে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘কোনও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কেন দেড়শ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হবে? বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা উৎসবের মেজাজে বিক্রি করছেন।’  

এক প্রশ্নের জবাবে একই বাজারের ক্রেতা মমিন হোসেন বলেন, ‘বাজারের চিত্র দেখলে কি মনে হয় দেশে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে? ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজ সংকট, এ তথ্য কি বিশ্বাস করতে হবে? দেশের প্রতিটি বাজারে পেঁয়াজ আছে। বিক্রেতারা পেঁয়াজের বস্তার ওপরে শুয়ে বসে আছেন। থরে থরে পেঁয়াজের বস্তা সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মূল্য কমছে না।’ 

কোনাপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়াচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের মূল্য যে কয়দফা বেড়েছে, তার হিসাব নেই। প্রতি দফায় কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের মূল্য। অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ার পেছনে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলেও জানান তারা।  

সবজি

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজী আবদুল মাজেদ বলেন, ‘অভিযাগ ঠিক নয়। আমরা পেঁয়াজের মূল্য বাড়াই না। যে দরে আমদানি করি, সেই দরের সঙ্গে পরিবহন খরচ ও মুনাফা যোগ করে বিক্রি করি।’    

জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘২/৪ দিনের মধ্যেই মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসবে। একইসঙ্গে চলতি নভেম্বরের শুরুতে ভারতেও নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। অন্যদিকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশেও নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে।’

এদিকে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগমের পাশাপাশি সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তবে, কোনও সবজির মূল্য কমেনি। বরং কিছু কিছু সবজির মূল্য বেড়েছে।

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের আগাম সবজি শিম, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি, লাউ, করলা, ঝিঙে, বরবটি, পটল, ঢেঁড়স, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম