বুলবুলে বিদ্যুতের ক্ষতি ১৮ কোটি টাকা

বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের খুঁটিঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে দেশের তিনটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর। কোম্পানিটি বলছে, তাদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, বুলবুলের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের কাজ চলছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, মেরামত শেষে সারাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও একদিন (মঙ্গলাবর ১২ নভেম্বর পর্যন্ত) সময় লাগবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বুলবুলের তাণ্ডবে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশের দুটি গ্রিড লাইন ‘ট্রিপ’ করে। এতে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ১৪ জেলা। তবে, সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকাল চারটা পর্যন্ত দেশের সব উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। উপজেলা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত লাইন মেরামতের কাজ এখনও শেষ হয়নি।

বুলবুলের আঘাতে ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আরইবি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের দুই দিনে প্রায় ৯৩ হাজার কিলোমিটার লাইন বন্ধ ছিল। প্রায় দুই হাজার খুঁটি পড়ে যায়। এতে অনেক ট্রান্সফরমারও পড়ে যায়। সব মিলিয়ে আরইবি বলছে, তাদের ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবি’র এক কর্মকর্তা জানান, ‘সোমবার বিকাল চারটা পর্যন্ত ৪৭ হাজার কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এখনও ২০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ৩৭ হাজার কিলোমিটার লাইন চালু হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাকি ১০ হাজার কিলোমিটার লাইন চালু করতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এতে ভোগান্তিতে থেকে যাবেন আরও ৭ লাখ গ্রাহক। তারা বিদ্যুৎ পাবেন মঙ্গলবার নাগাদ।’

এদিকে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর বিতরণ বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির যে পরিমাণ নিরূপণ করেছে, তাতে ৬৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পিডিবির ৩৩ কেভির চার কিলোমিটার লাইন, তিনটি টাওয়ার, ১১ কেভির আড়াই কিলোমিটার লাইন, ১১টি খুঁটি এবং দশমিক ৪ কেভির সাড়ে ১২ কিলোমিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার সকালের মধ্যে সব বিতরণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার করেছে পিডিবি।

ওয়েস্ট পাওয়ার জোন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্র বলছে, ঝড়ের সময় ছয় থেকে সাত লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিতরণের বাইরে ছিল। তবে, সোমবার দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন বলেন, ‘৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ওজোপাডিকো’র এক হাজার ১৩৩টি খুঁটি পড়ে গেছে। এছাড়া, ২১১ কিলোমিটার লাইন ছিঁড়ে গেছে।’

এদিকে, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সোমবার ১০টা নাগাদ তাদের সব সঞ্চালন লাইন স্বাভাবিক হয়েছে দাবি করে। পিজিসিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বরিশাল-মাদারীপুর ১৩২ কোভি এবং বাগেরহাট-ভান্ডারিয়া ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন দু’টির ওপর গাছ পড়ে ট্রিপ করায় বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে, সোমবার সকালে ঠিক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।