এসপিএম আসছে না আগামী বছরও, বাড়ছে ব্যয়

ctgআমদানি করা জ্বালানি তেল নিরাপদে ও স্বল্প ব্যয়ে খালাসের লক্ষ্যে সরকার সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় ২০১০ সালে। প্রকল্পটির কাজ আগামী মাসে (ডিসেম্বর) শেষ হওয়ার কথা। তবে শেষ মুহূর্তে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়ও।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) থেকে অর্থ না পাওয়ায় সময়মতো এসপিএম নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আগের নকশায়ও ত্রুটি ছিল। নতুন নকশায় গভীর সমুদ্র থেকে দুটি পাইপলাইনে তেল খালাসের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য হবে ২২০ কিলোমিটার। এতে ব্যয় বেড়ে গেছে। সংশোধনীর পর প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেসময় আইডিবি ৯০৪ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ২০১৩ সালে সংস্থাটি অর্থায়ন করবে না বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) জানিয়ে দেয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরোর (সিপিপি) সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চুক্তি করে। ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, আমদানি করা অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেলের খালাস কার্যক্রম আরও সহজ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়িত হলে কুতুবদিয়ার সাগরবক্ষে ভাসমান আনলোডিং ফ্যাসিলিটি স্থাপন এবং সেখান থেকে সাব সি-পাইপ লাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল সরাসরি ইস্টার্ন রিফাইনারির ট্যাংক ফার্মে যাবে এবং সেখান থেকে পরিশোধিত তেল তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির মূল স্থাপনার ট্যাংক ফার্মে যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অপরিশোধিত তেল জাহাজ থেকে স্থলভাগে আনতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সময় লাগবে মাত্র ২ দিন। সে অনুযায়ী প্রতি টন তেল খালাসে প্রায় ৫ ডলার সাশ্রয় হবে। এই হিসাবে বছরে বিপিসির ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খালাসের সময় যে বিপুল পরিমাণ তেল চুরি হয়, তাও রোধ করা সম্ভব হবে। কমবে সিস্টেম লসও।
কর্মকর্তারা জানান, বিপিসি’র অধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল শোধন করতে পারে। নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ইস্টার্ন রিফাইনারির বার্ষিক সক্ষমতা ৪০ লাখ টনে উন্নীত হবে।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, ‘অনেক আগে উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে পিছিয়ে যায় প্রকল্পটি। ২০১৭ সালে চুক্তি সইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কাজের গতি ভালো। আমরা আশা করছি দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সিস্টেম লস ও সময় দুই-ই বাঁচবে।’