পেঁয়াজের ট্রাকের সামনে ভিড় কমেনি এখনও

পেঁয়াজের জন্য ভিড়

বিমানে এবং জাহাজে করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে মিয়ানমার ও মিসর থেকে। সংকটেরও দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন পেঁয়াজও বাজারে আসার সংবাদ ও প্রমাণ দুটিই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, বাস্তবতা হলো এখনও মোটেই কমেনি পেঁয়াজের দাম। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও পেঁয়াজ আমদানি করে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলেও আমদানির পেঁয়াজেও দাম কমেনি বাজারে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির ট্রাকের সামনে সাধারণ মানুষের ভিড়। 

জানা গেছে, আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালাস করে নির্দিষ্ট দামে তা সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবিকে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। টিসিবি তা ৪৫ টাকা কেজি দরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বিক্রি করছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও আমদানি করা পেঁয়াজ ১৬০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রীর নানা আশ্বাস কোনও কাজে আসছে না। পেঁয়াজের দাম কবে নাগাদ কতো কমবে, তা চিন্তা করাও কঠিন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তাই পেঁয়াজ নিয়ে এ নৈরাজ্য ও অরাজকতা কবে শেষ হবে প্রশ্ন ক্রেতাদের। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখনও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি করা টিসিবির ট্রাকের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। শুরুতে জনপ্রতি ২ কেজি করে দেওয়া হলেও এখন একজন ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে পাচ্ছেন মাত্র এক কেজি পেঁয়াজ। এক কেজি পেঁয়াজ কেনার জন্য একজন ক্রেতাকে ঘণ্টারও বেশি সময় রোদের মধ্যে ঠায় রাস্তার পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এখানেই শেষ নয়। বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে লাইনের বাইরে থেকে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কেনার চেষ্টাও করেন অনেকে। ফলে প্রতিদিনই এমন ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টিসিবির ট্রাকের আশপাশের পরিবেশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তার পক্ষে তার একান্ত সচিব হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, টিসিবি রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৫০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। প্রতিটি ট্রাকেই প্রতিদিন (একমাত্র শুক্রবার ছাড়া) এক টন করে পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত বাজারে এই পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসবে, ততোদিন টিসিবির এই কার্যক্রম চলবে। 

এদিকে ভোক্তাদের মনে প্রশ্ন, আসলে পেঁয়াজ নিয়ে হচ্ছেটা কী? এই বিষয়টি নিয়ে তারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও হতাশ। ক্রেতারা দিশেহারা। তারা মনে করেন, এর অবসান হওয়া প্রয়োজন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও দেশি পুরান পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা মিসরের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আরও উঠবে। দামও কমবে। এর বাইরে টিসিবির কার্যক্রমও চলবে। তিনি জানান, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে দেশে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়টি ভবিষ্যতে মাথায় রেখে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের ক্রেতা নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। এখনও পেঁয়াজের দাম কমছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এত পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও দাম না কমার বিষয়টি রহস্যজনক। তিনি বলেন, অবশ্যই এটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের দেখা উচিত।