বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী সিরামিক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন।
টিপু মুনশি বলেন, রাজস্ব কালেকশনে আমাদের সঙ্গেও এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বসা দরকার। ট্যারিফ কমিশন বলে কিছু আছে সেটা ভাবাই হয় না। ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এনবিআরকে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘এনবিআর যে পদ্ধতিতে রাজস্ব সংগ্রহ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ পদ্ধতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে আয়কর দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু কয়জন দেয়? এই পরিধিটা যদি বড় না করা হয়, তাহলে যারা দেয় তাদের ওপরই চাপ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে যারা দেয় তাদের তো নাভিশ্বাস উঠে যাবে।’
তারপরও ব্যবসায়ীদের স্যালুট জানাই এসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা দেশের বাণিজ্যকে বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আমি আগামীতে এনবিআরের সঙ্গে বসবো। এ ব্যাপারে কথা বলবো। ট্যারিফ কমিশন হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান। এনবিআরকে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বসে ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে বলবো।
টিপু মুনশি বলেন, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না। এত সুদ হলে একটার পর একটা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়বে। এটা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণে সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন। এ জন্য ব্যাংকারদের নানা সুবিধা দেওয়া হলো। ব্যাংকাররা সুবিধাটা পুরোপুরি নিলো। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সুদহার এক অংকে আনলো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুদের হার কমার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীও অনেকবার তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও প্রাইভেট ব্যাংক সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনেনি। তারা সুবিধা নিলো, প্রধানমন্ত্রী বারবার বললেন, তারপরও কাজের কাজের কিছুই হলো না।’
তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের দেশই পৃথিবীর ব্যতিক্রমী দেশ, যেখানে স্প্রেড অনেক হাই। অন্যান্য দেশে যেখানে স্প্রেড আড়াই থেকে তিন শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে এটা ৬ শতাংশের ওপরে। এট হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, ‘এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের অর্থনীতির কী হবে, ব্যবসায়ীরা যাবে কোথায়? এ ধরনের কথা বললে মনে হবে যে মন্ত্রী বলছে না, ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোনও ব্যবসায়ী বলছে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, আমিও একজন ব্যবসায়ী। তার জন্য আমার কথাবার্তা ব্যবসায়ীদের মতো। মন্ত্রীর মতো ভাব-টাব এখনও আসে না।’
‘আমি অর্থমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকি, আর অর্থমন্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুদহার এক অংকে নামিয়ে না আনলে কোনও ব্যবসা করা যাবে না। অন্তত জেনুইন ব্যবসা করা যাবে না। অন্য কিছু করা গেলে যাবে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকারদের নিয়ে বসেছিলেন। সম্ভবত জানুয়ারি থেকে সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেখি কী হয়, আমাদের ভরসা করা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।’
এশিয়ার অন্যতম সিরামিক মেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০টি দেশের ১৫০টি ব্র্যান্ড অংশ নিচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ মেলা দর্শনার্থী ও ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এছাড়া অংশ নিচ্ছেন ৩০০ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ও ৫০০ জন বায়ারস হোস্ট।