জরুরি গ্যাস বন্ধে প্রচারণার অভাব, বাড়ছে গ্রাহক ভোগান্তি

রাজধানীতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে হুটহাট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে বন্ধের আগে সঠিক প্রচারণা না করায় তাদের ‘জরুরি গ্যাস বন্ধের বিজ্ঞপ্তি’ জানতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশিরভাগ মানুষ। গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এমন অভিযোগ অনেক দিনের। নিজেদের ওয়েবসাইটে আর গুটি কয়েক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েই দায় মুক্ত হতে চাইছে তিতাস। তবে গ্রাহকরা বলছেন, এ ধরনের গ্যাস বন্ধের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপকভাবে মাইকিং বা গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস করা উচিত। কিন্তু এসব কিছুই করে না তিতাস। এতে করে অনেক সময় গ্যাস চলে যাওয়ার পর গ্রাহক বুঝতে পারে গ্যাস থাকবে না।

রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকলে ৬টা পর্যন্ত গ্যাস ছিল না রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায়। একইভাবে গত সপ্তাহেও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল একই এলাকায়। তিতাস বিতরণ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলছেন, আট ইঞ্চির একটি পাইপ লাইন সংস্কারের জন্য গ্যাস সরবরাহ জরুরিভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু, গ্যাস চলে যাওয়ার অনেক পরে এই এলাকার সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে আজ গ্যাস থাকছে না।

বনশ্রী ব্লক সি এর বাসিন্দা ইয়াসমিন সুলতানা বলছেন, সকাল নয়টার একটু পরেই গ্যাসের চুলার আঁচ কমে আসে। এরপর একেবারেই গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিন গ্যাস কমলেও চুলা অন্তত সামান্য জ্বলে। কিন্তু কাল একেবারেই জ্বলেনি। আশেপাশে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি গ্যাস নেই। কিন্তু, গ্যাস কেন নেই বা কখন আসবে এমন কথা কেউ জানাতে পারেনি। এরপর তিতাসে ফোন দিয়ে জেনেছেন, সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নাকি গ্যাস থাকবে না। তিনি বলেন, গ্যাস না থাকাতে সারাদিনই দুর্ভোগে কেটেছে। দুপুরে হোটেলে খাবার কিনতে গিয়েও পাননি। আগেই সব খাবার শেষ হয়ে গিয়েছে।

এখন দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলে তা আগে ভাগেই গ্রাহককে জানানো হয়। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএস করে। আবার স্থানীয়ভাবে ব্যাপকভাবে মাইকিংও করা হয়। কিন্তু গ্যাসের বেলায় এ ধরনের প্রচারণার অভাব রয়েছে। গ্যাস না থাকলেও গ্রাহকের মোবাইলে কোনও এসএমএস পাঠানো হয় না। আবার ব্যাপকভাবে মাইকিং করা হয় না। যদিও তিতাস বলছে, তারা মাইকিং করে থাকে। এছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পাশাপাশি তারা ওয়েবসাইটে নোটিশ দিয়ে থাকে।

বনশ্রীর সি ব্লকের অন্য একটি বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রবিবার যে গ্যাস থাকবে না এমন কোনও মাইকিং তিনি শুনেছেন কিনা। জবাবে মোতালেব নামের ওই দারোয়ান বলছেন, তিনি এমন কোনও মাইকিং শোনেন নাই। আশেপাশের কেউ এ ধরনের কোন আলোচনাও করেনি। তিনি বলেন, কেউ না কেউ শুনলে আলোচনা হতো। তাহলে আমরা বাড়ির বাসিন্দাদের জানাতে পারতাম।

এদিকে বনশ্রী এফ ব্লকের বাসিন্দা মিঠি চৌধুরী জানান, এমনিতেই গ্যাস সমস্যা লেগেই থাকে। দিনের মধ্যে একবেলা গ্যাস আমরা পাই না। গত কয়েকদিন ধরেই সন্ধ্যার পর গ্যাস থাকে না। তিনি বলেন, গ্যাস যে থাকবে না তা কখনোই মাইকে আমরা শুনতে পাই না। বিদ্যুৎ না থাকলে যেমন মাইকিং করা হয়, আগামীকাল বেলা এতটা থেকে এতটা বিদ্যুৎ থাকবে না। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমরা কখনোই শুনিনি এমন কোনও মাইকিং। একই অভিযোগ করেছে বনশ্রীর বাসিন্দা দিলরুবা বেগম, জান্নাত আরা, শিখা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন।

রামপুরার বাসিন্দা রওশন আরার অভিযোগ, বেশিরভাগ দিনই গ্যাস এক বেলা থাকে না। মাঝে মাঝে সারাদিনও এই সমস্যা থাকে। যেদিন এক বেলা থাকে না সেদিন আমরা অন্য বেলা রান্না করে খাবারের ব্যবস্থা করে থাকি। কিন্তু রবিবারের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। সকাল থেকে কোনও গ্যাস ছিল না। গ্যাস যে থাকবে না তা আপনি শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্যাস যে থাকবে না তার কোনও মাইকিং শুনিনি।

একই ধরনের অভিযোগ করেন রামপুরার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকেই হঠাৎ করেই গ্যাস নাই। সারাদিন বাইরে থেকে খাবার কিনে খেলাম। আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। এমন হুট করে গ্যাস বন্ধ করার আগে ব্যাপকভাবে গ্রাহকদের জানানো উচিত । নইলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বেই।

এসব অভিযোগের বিপরীতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুনের দাবি গ্যাস বন্ধের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গ্যাস পাইপলাইন মেরামত করতে গেলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতেই হয়। সেজন্য আগে থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, পাশাপাশি এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘মাইকিং করা হয় পুরো এলাকাজুড়ে ঘুরে ঘুরে। হয়তো কেউ বাসায় নেই।  অথবা কেউ খেয়াল করে মাইকিং শোনেননি। এই দায় তো আমাদের না। আমরা মাইকিং তো করছি।’

মো. আল মামুন আরও বলেন, ‘এক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এরমধ্যে যে কয়দিন গ্যাসের পাইপলাইনের কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল প্রতিবারই আমি মাইকিং এর অনুমতি দিয়েছি।’