নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতা কম, দাম বেশি

নিত্যপণ্যের বাজার (ছবি: ফোকাস বাংলা)নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে আগের মতোই বিক্রেতা আছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই আগের মতো। বাজারে আগের মতোই পণ্য আছে, কিন্তু দাম কমেনি। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম, চাহিদা কম থাকলে জিনিসপত্রের দাম কমে যায়। কিন্তু বাজারে এর উল্টো চেহারা, দাম আরও বেড়েছে। ক্রেতা না থাকার পরেও পণ্যের দাম বাড়া প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, আগের মতো পণ্য আসছে না। পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় কমপক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১৪টি পণ্যের দাম বেড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, অনেকেই ঘরে থাকার প্রস্তুতি হিসেবে গত কয়েকদিন ধরে বেশি করে পণ্য কিনছেন। যে কারণে বাজারে এর প্রভাব এখনও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতা কম থাকলে সাধারণ জিনিসপত্রের দাম কমার কথা। কিন্তু কমছে না, কারণ চালসহ বেশ কিছু পণ্য পচে না। বিক্রেতারা ভালো করেই জানেন, এই পণ্যগুলোর চাহিদা আগামীতে আরও বাড়বে, সে কারণে তারা কম দামে এসব পণ্য ছাড়ছেন না।’ এছাড়া পণ্য আনা-নেওয়া করা ড্রাইভারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পুলিশি বাধার কারণে বর্তমানে পণ্য সরবরাহ কিছুটা কমে এসেছে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে বিক্রেতারা জানান, ক্রেতার সংখ্যা কমলেও বেচা-বিক্রি ভালো। কারণ, যারা আসছেন তারা আট-দশ দিনের বাজার একসঙ্গে নিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারগুলোতেও মানুষের আনাগোনা কম দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর মানিকনগর বাজারের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। পুলিশও টহল দিচ্ছে। যে কারণে ক্রেতা কম। তবে গত দুই-তিন দিন ধরেই যারা বাজারে আসছেন তারা ১০ থেকে ১৫ দিনের বাজার একসঙ্গে করছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি আরও জানান, চাল-ডাল, ডিমসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম বেশি।

কাঁচা বাজারএদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ঘর ও হাত পরিষ্কার করার সামগ্রী বেশি কিনতে দেখা গেছে। নিত্যপণ্যের দোকানে ক্রেতারা সাবান, জীবাণুনাশক, টিস্যু, মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার বেশি কিনছেন। এছাড়া ওষুধের দোকানেও হ্যান্ড গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে ভিড় দেখা যায়।

বাজারে নাজিরশাইল, মিনিকেট, পাইজাম, স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। খুচরা বাজারে ৭ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি চাল। কেজিতে ৭ টাকা বেড়ে মিনিকেট (নতুন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, মিনিকেট পুরান চাল ৬২ টাকা, বাসমতি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা, কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা।

এদিকে টিসিবির তথ্য বলছে, হলুদ-মরিচসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আমদানি করা হলুদ কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। আগে যে হলুদ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। দেশি হলুদের দাম বেড়েছে কিজিতে ৪০ টাকা। ১৬০ টাকা কেজি শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ডাবলি (অ্যাঙ্কর) বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা, ১৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। ছোলার দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে ৫ টাকা। আমদানি করা আদা কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

এদিকে সবজির বাজারও চড়া। মানিকনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনও সবজিরই ঘাটতি নেই বাজারে। তবে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, শিমের বিচি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি-ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বাঁধাকপি (গ্রিন) ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।