করোনার ক্ষতি পোষাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির বড় প্রকল্পের কাজ রিসিডিউল হচ্ছে

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (ছবি: সঞ্চিতা সীতু)

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ রিসিডিউল হচ্ছে। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প উৎপাদনে আসতে পারছে না। একারণেই রিসিডিউলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পের একটি চিত্র থাকবে। সেই সঙ্গে কীভাবে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, তারও একটি পরিকল্পনা দেওয়া হবে অনুমোদনের জন্য।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত সপ্তাহে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বৈঠকে বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর তিনি পেট্রোবাংলা এবং বিপিসি, পিডিবি এবং বিদ্যুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ক্ষতির পরিমাণ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রকল্প বাছাই করারও নির্দেশ দেন।

ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করার দিকে নজর রাখতে হবে। এজন্য কোন প্রকল্পগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা জরুরি, তা নির্ধারণ করে তালিকা তৈরি করতে হবে।’ রিসিডিউল করার কথাও বলেন প্রতিমন্ত্রী।

বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্মাণ শুরু হওয়া তিনটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ করোনার কারণে প্রায় বন্ধ রয়েছে বলা চলে। অন্যদিকে, রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলছে খুব ধীর গতিতে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট আগামী জুনে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু লকডাইনের কারণে সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। জানা গেছে, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট এবং রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও এখন তা সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল।

কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সঞ্চালন এবং বিতরণের কাজে যেসব বড় প্রকল্প রয়েছে তাও ঝুলে যাচ্ছে। বিশেষ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) গোপালগঞ্জে সাবস্টেশন নির্মাণ এবং সেখান থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চীনের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল, তাও থমকে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার কারণে বলতে গেলে সবই থেমে আছে। বড় প্রকল্পগুলোর কাজ নিয়ে তাই আমরা চিন্তিত।’ তিনি জানান, ডিপিডিপির একটি বড় প্রকল্পের নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের মূল অফিসই চীনের উহানে। তাদের অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাজও আটকে গেছে। চেষ্টা করছি অনলাইনের মাধ্যমে কাগজপত্রের কাজগুলো এগিয়ে রাখতে। মাঠের কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে যেহেতু সময় চলে যাচ্ছে, তাই নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করছি আমরা। যাতে সব খোলার পর দ্রুত কাজগুলো শুরু করা যায়। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখে সময় বাঁচিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সময় বাঁচানোর পাশাপাশি আমরা আর্থিক বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছি।’

এদিকে সাগর থেকে তেল আনার জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। সাগরের মধ্যে পাইপ লাইনটি নির্মাণ করছে চীনা শ্রমিকরা। এই প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত আরও একটি পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ অনেকটাই থমকে গেছে। বাংলাদেশ-ভারত তেল পাইপ লাইন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপ লাইন নির্মাণের কাজও এগোচ্ছে না।

বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কাজ করা খুবই কঠিন। এখন ঠিকাদাররা যেমন দেশের বাইরে থেকে কর্মী আনতে পারছে না, তেমনই নিরাপত্তার কারণে দেশের শ্রমিকরাও কাজ করতে পারছেন না। একারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কী করে কাজ করা হবে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশনা প্রয়োজন। সেই কাজই এখন করা হচ্ছে।

বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের দায়িত্বে আছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের টুকটাক কাজ চলছে। বেশিরভাগ বন্ধ আছে। আমাদের কাজ মূলত মাঠ পর্যায়ে। আমরা কাজ করি মূলত নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। বর্ষায় কাজ হয় না বললেই চলে। তাই চিন্তা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে কাজের পরিমাণ ও ক্ষতির হিসাব জানাতে বলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন ২০টির মতো প্রকল্প আছে, যার বেশিরভাগের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে।’