বকেয়া বিলে আর্থিক ঘাটতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিতরণ কোম্পানিগুলো

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতকরোনার প্রকোপে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট করে কোম্পানিগুলোকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি বিভাগ।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দেশের বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক সংকটে পড়ার কথা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে কী করে সমাধান দেওয়া যাবে সে বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনাও চেয়েছে তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এরইমধ্যে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে চিঠি দিতে। সবক’টি বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে চিঠি পেলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিকনির্দেশনার জন্য পাঠানো হবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সব কোম্পানি এবং সংস্থাকে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলেছি। সব সংস্থা ও কোম্পানির হিসাব একসঙ্গে করে আমরা ক্ষতির পুরো হিসাব বের করবো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর পাশাপাশি নিজেরা কীভাবে এই ঘাটতি মোকাবিলা করতে পারি তা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

পিডিবি জানায়, প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। পিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে খুচরা বিক্রি করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল আদায় ঠিকঠাক হয়েছে। তবে মার্চের ছুটির পর থেকে বিল আদায় না হওয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবির বিল পরিশোধ সম্ভব না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে পেট্রোবাংলা জানায়, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে প্রতিমাসে দুই হাজার ৫০ কোটি থেকে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকার গ্যাস বাবদ রাজস্ব আদায় করে থাকে। এক্ষেত্রেও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার কাছ থেকে গ্যাস কিনে পরে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার জুন পর্যন্ত আবাসিক বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল আদায় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, এখন দেশের বিভিন্ন শিল্প মালিকরা বিল পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি দিচ্ছে। ফলে আবাসিক বিলের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং শিল্প বিলও ঝুলে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে বিল আদায় না হলে বিতরণ কোম্পানি পিডিবিকে টাকা দিতে পারবে না। আবার পিডিবি টাকা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর বিল পরিশোধ করতে পারবে না। ফলে জটিলতা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় সেক্ষেত্রে সংকট সবখানে ছড়িয়ে পড়বে।

জ্বালানি বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা দেশের খনিগুলোর আইওসির (আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি) কাছ থেকে গ্যাস কিনি আবার বিদেশ থেকেও এলএনজি আমদানি করা হয়। ফলে এসব বিল নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে বিল আদায় না হলে অন্যদের বিল দেওয়াটাও কঠিন হয়ে যায়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সম্প্রতি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৫ ভাগ ব্যবহার করে আরইবি। গত মার্চে এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিতরণ করা বিদ্যুৎ বিলের ২০ ভাগ আদায় হয়েছে। অনাদায়ী রয়েছে ৮০ ভাগই। এপ্রিলে এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকার কিছু বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে এ সংস্থা। কিন্তু, বিল আদায় হয়েছে মাত্র পাঁচ ভাগ।

গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে তিতাস তাদের দুরবস্থার কথা জানিয়েছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন বৈঠকে জানান, দেশে সরবরাহ করা দৈনিক তিন হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে এক হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করে তিতাস। ফেব্রুয়ারি মাসে তিতাস গ্রাহকের কাছ থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। আর মার্চে এসে যা নেমে এসেছে মাত্র ৪৫ কোটিতে। অর্থাৎ বেশিরভাগ গ্যাস বিক্রির টাকা পড়ে রয়েছে।