বুধবার (২৪ জুন) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বাজেট পরবর্তী এক অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে সিপিডি বলেছে, যেসব কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প অতি সম্প্রতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। বাজেটে কয়েকটি কয়লাচালিত প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাতিল করে সঞ্চালন এবং বিতরণে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়।
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান সামঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘কেন রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা থেকে সরকার বের হতে পারছে না।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘এখন শিল্প কারখানার ক্যাপটিভসহ আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট। চার হাজার মেগাওয়াট রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। অর্থাৎ, ক্যাপটিভ বাদে রয়েছে ১৯ হাজার মেগাওয়াট। এই ১৯ হাজারের মধ্যে আবার ডিরেটেড ক্যাপাসিটি (অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে উৎপাদন কমে আসায় প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা) ১০ ভাগ বাদ দিলে থাকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এরমধ্যে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে আয়ু ফুরিয়েছে। তাহলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এখন করোনার মধ্যে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের দরকার হচ্ছে।’ করোনা না থাকলে বিদ্যুতের সংকট তৈরি হতো উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সমালোচনা করার আগে এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জানা শোনার প্রয়োজন রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী সিপিডি’র সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘সরকার কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নীতি পরিবর্তন করেছে। এখন মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কয়লা থেকে উৎপাদন করা হবে। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দক্ষতা যেখানে ৪২ থেকে ৪৩ ভাগ, সেখানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দক্ষতা ৬২ ভাগ। এছাড়া, এলএনজি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। এজন্য নতুন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কয়লার বদলে এলএনজিকে প্রাধ্যান্য দেওয়া হবে।’
সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ড. ফয়জুল কবির খান বলেন, ‘প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন বা বাতিল করা যেতে পারে। বিদ্যুতের দাম বাজার চাহিদার ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান করীম বলেন, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ভালো। এ জন্য এগুলো উৎপাদনের তালিকায় অগ্রাধিকার পায়। সরকার যেভাবে আশা করেছিল, সেভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি।’ তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্পগুলোতে কোভিড পরিস্থিতিতে একটু ধীরে এগুনো উচিত। না-হলে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে।’
সেমিনারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, স্রেডার সদস্য সিদ্দিক যোবায়েরসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।