অর্থপাচার ঠেকাতে বেসরকারি এলসির তদারকি চায় ব্যাংক

অর্থ পাচার



বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি ব্যাংকের এমডিরা। তারা বলেছেন, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে না পারার কারণে এ খাতে অর্থপাচারের ঝুঁকি বেশি। এজন্য তারা একটি কেন্দ্রীয় সেল গঠন করে তা থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম তদারকি করার প্রস্তাব দেন।

সোমবার (১০ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন তারা।
দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধে এদিন জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা রাজী হাসান ও সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) অংশগ্রহণ করেন।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস উল ইসলাম বলেন, অর্থপাচার বন্ধে বেসরকারি এলসির তদারকি আরও বাড়ানো জরুরি। সরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ করে সরকারি খাতের এলসি নিয়েই বেশি কাজ করে। ফলে সরকারি ব্যাংকে অর্থপাচারের শঙ্কা কম থাকে।
কৃষি ব্যাংকের এমডি আলী হোসেন প্রধানীয়া অর্থপাচার প্রতিরোধে ভেসেল ট্র্যাকিং ও কনটেইনার ট্র্যাকিং করার প্রস্তাব দেন।  এ সময় তিনি আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং প্রতিরোধে ব্যাংকের নিজস্ব ডাটাবেজের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় একটি ডাটাবেজ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধে পণ্যের মূল্য তদারকির বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ গড়ে তোলার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে একটি ডাটাবেজ গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বড় মাধ্যম হিসেবে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিংকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থপাচার বন্ধে তিনি ব্যাংকগুলোকে নীতিমালার বাস্তবায়নে আন্তরিকতা ও দক্ষতা অর্জনের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তিনি ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের পদক্ষেপ দিতে বলেন।
সেন্ট্রাল ডাটাবেজ করে আমদানি-রফতানির পণ্যমূল্য যথাযথভাবে নিরূপণ করা যায় কিনা সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিএফআইইউ বা অন্যান্য সংস্থাকে তিনি পরামর্শ দেন। যেকোনও উপায়ে দেশ থেকে অর্থপাচার ঠেকাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ’র প্রধান রাজী হাসান বলেন,  ‘বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডির যৌথ উদ্যোগে প্রণীত ‘বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ’ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং ও বিদেশে অর্থপাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর বাস্তবায়ন ও কঠোর তদারকি করা হলে অর্থপাচার কমে যাবে।’