ক্রেতাদের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে: দোকান মালিক সমিতি

১২৩ক্রেতাদের জন্যই দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছে মহানগর দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটি বলছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কথা শুনেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে চাহিদার অতিরিক্ত পেয়াজ কিনতে থাকে। তখন দোকানে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এতে দোকানিরা দাম বাড়িয়ে দেন।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে  কাওরান বাজারে অবস্থিত একটি হোটেলে পেঁয়াজের বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির আয়োজনে এক মতনিময় সভায় আমদানিকারক ওমর ফারুক একথা বলেন।

গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাওরান বাজারে যতটুকু চাহিদা ততটুকু মাল আসে। আর আপনি-আমি কী করেছি, আমার দুই কেজি দরকার, কিন্তু কিনে ফেলছি ১০ কেজি। আপনি যদি আমাকে ২০০ টাকার জিনিসে ৩০০ টাকা দেন, তাহলে আমার নিতে আসুবিধা কোথায়? ঠিক যারা বিক্রি করছে তারা যখন দেখলো, ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এবং যত দাম চায় তত দিয়েই নিচ্ছে, যে কারণে এই আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা আমার এবং আপনার বা জনগণের কারণেই ঘটছে। জনগণ এত বেশি নেয় কেন? একটু কমিয়ে নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পর সরকার ৮টি বড় বড় কোম্পানিকে বললো, পেঁয়াজ দিয়ে দেশকে ঢেকে দাও। তাতে আমার মতো ক্ষুদ্র কয়েক হাজার আমদানিকারক তারা ভয়ভীতিতে বলেছে— আমাদের আমদানি করার দরকার নেই। ওই যে ৮-১০টি কোম্পানি পেঁয়াজ দিয়ে দেশকে ঢেকে দেবে। কিন্তু তারা এমনভাবে ঢেকে দিয়েছে পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকায় ঠেকেছে। এবার দেশে পেঁয়াজ  একটু বেশিই উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এত বেশি হয়নি যে, আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ। তবে আমাদের যে মজুত রয়েছে তাতে সংকট হবে না।’

এই আমদানিকারক অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশ থেকে বন্দরে পেঁয়াজ আসার পর সারাদেশে যদি ১০০ কন্টেইনার প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ২০টি কন্টেইনার খালাস করা হয়। ফলে বাজারে যেখানে দাম কেজিতে ২০০ টাকা উঠেছে, সেটা থেকে আর নামতে দেয় না। সেখানে সরকারের করণীয় হচ্ছে বন্দরে পেঁয়াজের কন্টেইনার তিন দিনের বেশি থাকতে পারবে না। সরকার কোটি টাকা ভর্তুকি না দিয়ে আমদানিকারকদের ভর্তুকি দিতে পারে।’

অনুষ্ঠানে সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান বলেন, ‘গত দুই দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা সারাদেশে মনিটরিং সেল গঠন করতে যাচ্ছি। যেখানে দাম সীমারেখার বাইরে চলে যাবে, সেখানে তাদেরকে পর্যবেক্ষণে এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে, আল্লাহর রহমতে পেঁয়াজের ঘাটতি আমাদের হবে না। হঠাৎ করে ভরতে থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই চিন, মায়ানমার, নেদারল্যাণ্ড, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক ও পাকিস্তাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৪০০ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। চলমান অবস্থায় ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বন্দরে খালাস হয়েছে। দুই দিনে এক দশমিক ৩৩ লাখ টন পেঁয়াজ ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণের পেঁয়াজ আমাদের মজুত রয়েছে। এব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। ক্রেতা সাধারণের কাছে কীভাবে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ পৌঁছে দেওয়া যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করে ফেলেছে। বাইরে থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হবে, তার থেকে ভালো পেঁয়াজ আমাদের কাছে রয়েছে। পেঁয়াজের ঘাটতি আমরা হতে দেবো না।’

এসময় সমিতির সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ঝন্টু, এম এ ইসলাম, ইসহাক ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।