আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) অনলাইনে এই সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে গ্রাহক সংযুক্ত হচ্ছে। এজন্য একটি হেল্প ডেস্ক করতে হবে। যাতে ২৪ ঘণ্টা গ্রাহককে সেবা দেওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন রাজশাহী অঞ্চলে কিছুটা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বিষয়টি আমি জানি। রাজশাহী অঞ্চলে বেশ কিছু আপগ্রেডেশন করা হচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে এই সমস্যা থাকবে না।’
তিনি নেসকোকে শহর এলাকায় আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেন। নেসকো স্কাডা এবং স্মার্ট সাবস্টেশন বসাচ্ছে। এতে কোথাও বিদ্যুৎ চলে গেলে তা কন্ট্রোল রুম থেকে বোঝা যাবে। স্মার্ট প্রিপেইড মিটার নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তি ছড়ান, এটা যেন কেউ না করতে পারে এজন্য সংসদ সদস্যদের সহায়তা চান তিনি। তিনি বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাজশাহীর মেয়রকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্য বিতরণ কোম্পানি আরও আগে থেকেই স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের যাত্রা শুরু করেছে। নেসকো একটু দেরিতে এই প্রকল্প শুরু করলো। তবে উত্তরাঞ্চলে যখন পিডিবি বিদ্যুৎ বিতরণ করতো তখন কিছু এলাকায় প্রিপেইড মিটার সংযুক্ত করা হয়েছিল। সঙ্গত কারণে নেসকোর জন্য প্রিপেইড মিটারের অভিজ্ঞতা নতুন না হলেও স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের অভিজ্ঞতা নতুন।
অনলাইনে রাজশাহীর সাগর পাড়া এলাকার নেসকোর বাসিন্দা সামসুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘আমরা আশা করছি এর মধ্য দিয়ে নেসকোর ভৌতিক বিলের হাত থেকে মুক্তি পাবো। কখনও বিল আগে ১০০ আবার কোনও সময় বিল আসে পাঁচ হাজার। কোনও কোনও সময় দেখা যায় বিল দেওয়ার তারিখের এক দিন আগে আমরা বিলের কাগজ হাতে পাই।’ উনার মতো আরো বেশ কয়েকজন গ্রাহক মিটার দেয়ার সুবিধার কথা জানান।
প্রিপেইড মিটারে অগ্রিম বিল দিয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এতে করে ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ বিল আদায় হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ভবিষ্যতে এই মিটারের মাধ্যমে স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার নিয়ে আমরা কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নতুন কোনও পদ্ধতিতে যাওয়ার সময়ই মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। আমাদের কাউন্সিলররা এটা মানুষকে বুঝিয়েছেন। এতে আশা করা হচ্ছে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’
তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, ‘সিলেটে যেমন আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন করা হয়েছে সেভাবে আমাদের রাজশাহীতে যদি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন করা হয়, তাহলে রাজশাহী আরও দৃষ্টিদন্দন হয়ে উঠবে।’
রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রিপেইড মিটারের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এতে আমাদের এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণের বৈশিষ্ট্যই পাল্টে যাবে।’ রাজশাহীর অগ্রগতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সহায়তার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘শুরুতে রাজশাহী, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার পাবেন। পরবর্তীতে রাজশাহী এবং রংপুরের অন্য এলাকার সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা হবে। আমরা যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি তাতে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যাচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে স্মার্ট সেবা প্রদান করছি। কেউ মিটার রিচার্জ করতে না পারলেও তিনি ধার বা ক্রেডিট নিয়ে চলতে পারবেন। এতে গ্রাহক নিজের বিদ্যুতের বিল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আমরা এর মাধ্যমে অগ্রিম রাজস্ব পাবো।’
অনুষ্ঠানে পিডিবি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ৫০ হাজার মিটার এর মধ্যে বসিয়েছি। আমরা আগামী নির্বাচনের আগে উল্লেখযোগ্য হারে প্রিপেইড মিটার বসানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এখন আমরা ৬০ লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’
নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের মানুষকে বিদ্যুতের ভালো সেবা দেওয়ার জন্যই স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। হংকং এর একটি কোম্পানির সফটঅ্যায়ার এবং চীনের একটি কোম্পানি থেকে মিটারগুলো কিনবে নেসকো। প্রথম পর্যায়ে আমরা পাঁচ লাখ গ্রাহককে এই প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৫ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার একটি প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেকে) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
নেসকোর চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম হুমায়ূন কবিরের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং নেসকোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।