এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠান যেহেতু শেয়ারবাজারে আসা শুরু হয়েছে, সেহেতু এর ভালো ফলও আমরা পাবো।’ তিনি বলেন, ‘আগামী বছরেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সুফল পাওয়া যাবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, যেসব ব্যাংক শেয়ারবাজারে আছে, তারা বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে আসা শুরু হলে এই বাজারের প্রতি মানুষের আস্থাও বেড়ে যাবে।
এদিকে বাজারের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে কয়েক মাসের অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মাঝেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। যদিও জুলাই-সেপ্টেম্বরের শেষে প্রায় সবগুলো ব্যাংক মুনাফায় রয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হলেও শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাত। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকার ১০টি স্থানই দখলে নিয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো। এরমধ্যে ২০ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের। বিমা কোম্পানিগুলোর বাড়ার মাঝে গত সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে ছিল প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ফলে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ার মূল্যে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে।
অপরদিকে, ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় একশ্রেণির বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরেই শেষ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। সপ্তাহজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এদিকে পুঁজিবাজারে সম্প্রতি কম পুঁজি খাটিয়ে অধিক লাভ করতে চাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে এ ধরনের শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে।
অবশ্য গত সপ্তাহজুড়ে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। এরপরও আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এর ফলে টানা দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন কমলো ৭ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা দশমিক ২২ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহ কমলো সূচকটি। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৫ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট ।
প্রধান মূল্য সূচকরে পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতন হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১১ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এদিকে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ১১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট।
সবকটি মূল্য সূচকের পতন হলেও সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে, বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল ১৪৪টি প্রতিষ্ঠান। দাম কমেছে ১৪০টির। আর ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬২৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৫২ কোটি ৪ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ১৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৯০৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৭৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা।