গ্যাসের খেলাপি গ্রাহকদের তালিকা চায় জ্বালানি বিভাগ

গ্যাসের বিলখেলাপিদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দেওয়া হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। বারবার চেষ্টার পরও বড় গ্রাহকরা বিল দিতে চাইছেন না। উল্টো বিল আদায়ের চেষ্টা করলে নানা রকম জটিলতা তৈরি করছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হবে না। সঙ্গত কারণে এবার বিল আদায়ে মন্ত্রণালয় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে বলে জানা গেছে।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমানের সই করা নির্দেশনায় বিতরণ কোম্পানি এবং মন্ত্রণালয়কে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে—১. তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি গ্রাহকদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। ২. বকেয়া আদায় এবং বকেয়া পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের কাজ নিয়মিত পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মনিটরিং করবেন। একইসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) এবং জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) তদারকি করবেন। ৩. বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়টি  ছাড়াও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস পাইপলাইন অপসারণ মনিটরিং কমিটিও তদারক করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে এভাবে গ্যাসের বিল আদায়ে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এবার কোভিড-১৯-এর কারণে বিল আদায় থমকে গেছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ফ্যাক্টরি চলছে বলেই গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। আর যেহেতু ফ্যাক্টরি চলছে, তাই বিল না দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই।

গত ১৫ ডিসেম্বর তিতাস এক প্রতিবেদনে জানায়, তারা গ্রাহকের কাছে এই মুহূর্তে ২ হাজার ১৯৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পাবে। এছাড়া অন্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানি হাল নাগাদ বকেয়ার তথ্য এখনও মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান সব কোম্পানিকে হালনাগাদ বকেয়ার তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা তো এখন শুধু দেশের গ্যাস ব্যবহার করি না। আমাদের এখন বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে সরবরাহ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা বিল না পাই, তাহলে রফতানিকারকদের দাবি কীভাবে পূরণ করবো। অপরদিকে আমাদের নিয়মিত আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে গ্রাহক যদি গ্যাসের বিল না দেয়, তাহলে আমাদের সংকটে পড়তে হয়।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, এখন দেশে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যার পুরোটাই গ্যাসে উৎপাদন হয়। দেশের শিল্পে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তার সিংহভাগই ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ। সঙ্গত কারণে শিল্প মালিকরাই বেশি বকেয়া রাখছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছেও বিপুল পরিমাণ বকেয়া জমেছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, বিল পরিশোধের চূড়ান্ত নোটিশে সায় না দিলে এবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা করা হচ্ছে।