এবার ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ধরা খেল ইউনাইটেড এয়ার!


ইউনাইটেড এয়ারঅবশেষে ধরা খেল বেসরকারি এয়ারলাইন্স—ইউনাইটেড এয়ার। যাত্রীসেবার নামে নিজেদের খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণের মাশুল দিতে হলো এবার সংস্থাটিকে। তবে, এর আগেও ইউনাইটেড এয়ারের বিরুদ্ধে যাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ ছিল। এতদিন সংস্থাটি পার পেয়ে গেলেও এবার  যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সংস্থাটির ঢাকা-টু-সৈয়দপুর ডোমেস্টিক ফ্লাইটের যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে বিমানবন্দরে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফের নির্দেশে ইউনাইটেড এয়ার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ইউনাইটেড এয়ারের একটি নির্ধারিত ফ্লাইট যাত্রীদের প্লেনে উঠিয়েও তাদের নামিয়ে দেয়। তবে, নামিয়ে দেওয়ার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, যাত্রীদের ক্ষতিপূরণও দিতে চায়নি। ওই ফ্লাইটের একজন যাত্রী বিমানবন্দরে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফকে ফোন করে জানান। খবর পেয়ে ওই ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এরপর যাত্রী ও ইউনাইটেড এয়ার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসেন তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত শোনার পর তাৎক্ষণিক যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

এ প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ ঘটনা অন্যদের সচেতন হতে সাহায্য করবে। ইউনাইটেড এয়ারকে আমি এর আগেও জরিমানা করেছিলাম বিভিন্ন কারণে। সংস্থাটির একটা মাত্র ডোমেস্টিক ক্রাফট কিন্তু তারা সার্ভিস দিচ্ছে তিনটা রুটে।

সকালে তাদের কক্সবাজার যে ফ্লাইট ছিল প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং হয়ে যাওয়ার পরও সেটি ফ্লাই করছিল না। এরপর কক্সবাজার থেকে ম্যাজিস্ট্রেট অল এয়ারপোর্ট অব বাংলাদেশ নামে যে পেইজ রয়েছে, ফেসবুকে সেখানে জানানো হলো, তাদের ট্যাকনিক্যাল সমস্যার কারণে ফ্লাইট দেরি হচ্ছে। কক্সবাজারের এক যাত্রীর কাছ থেকে শুনলাম, তাদের সাড়ে নয়টার ফ্লাইট শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, এরপর চট্টগ্রাম যায় দেরি করে। চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট এলেও সমস্যা হয় সৈয়দপুরের টায়। সৈয়দপুরে সন্ধ্যার পরে ল্যান্ড করা যায় না। এই ফ্লাইট ছিল দুপুর আড়াইটায়।

মোহাম্মদ ইউসুফ আরও বলেন, সেদিন সাড়ে পাঁচটা অথবা ছয়টার দিকে একজন যাত্রী আমাকে ফোন করে এ সমস্যার কথা জানান, ইউনাইটেড এয়ার আমাদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ওখানে যাই। যাত্রীরা ক্ষুব্ধ এবং ইউনাইটেডের কর্মকরতারাও অনড় যে তারা তাদের পলিসি থেকে নড়বে না। কিন্তু  ইউনাইটেড  সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত যাত্রীদের বসিয়ে রেখেছে, বাসে করে প্লেনের কাছে নিয়ে গেছে, ওখানে চট্টগ্রাম থেকে প্লেন আসার পরে যাত্রীদের প্লেনে তুলেছেও। ওঠানোর পরে তাদের নামানো হয়েছে। যাত্রীরা জানেই না, তাদের কেন নামিয়ে আনা হলো, তারা আদৌ যেতে পারবে কি না, সেদিন এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেই। অন্য কোনও ফ্লাইটও নেই যে, তারা যাবে, অথচ বেশিরভাগই জরুরি যাত্রা। আমি দুপক্ষকে নিয়ে এলাম, তাদের শুনলাম। ইউনাইটেডকে দেওয়া প্রথম শর্ত ছিল, প্রথমেই সব যাত্রীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একটা মাত্র ক্রাফটের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রুটে চলাচল করবেন এটা কখনও হয় না, এটা ব্যবসার পর্যায়েই পড়ে না। দ্বিতীয়ত, যে সব যাত্রীদের জরুরি কাজ রয়েছে, তাদের ক্যাশ রিফান্ড দিতে হবে তাৎক্ষণি। যেন তারা বিকল্প পথে সৈয়দপুর যেতে পারেন।  তৃতীয়ত, বাকি যাত্রীদের সকালের ফ্লাইটে সৈয়দপুর পৌঁছে দিতে হবে। এছাড়া, যাত্রীদের ওই রাতের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যয়ভারও ইউনাইটেডকে বহন করতে হবে।

 মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এ ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। ডোমেস্টিক কিংবা আন্তর্জাতিক রুটে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে, অথচ আমাদের অভ্যন্তরীণ রুটে এ ধরনের কোনও নিয়ম নেই, সিভিল এভিয়েশনের করার কথা এবং সেই আইন মেনেই ডোমেস্টিক লাইনগুলো সেবা দেবে। আমরা যে শর্ত দেব, যে আইন দেব, যে নিয়ম দেব সেটা তাদের মানতে হবে। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সিভিল এভিয়েশন এ ধরনের কোনও রুল দেয়নি এ পর্যন্ত। সিভিল এভিয়েশন আন্তর্জাতিক নিয়ম দেখে কিংবা অভ্যন্তরীণ রুটে অন্যান্য দেশের নিয়ম দেখেই একটা আইন করে দিতে পারে। কিন্তু আমাদের এ ধরনের কোনও ইন্সট্রাকশন নেই, কিন্তু খুব দরকার।  

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউনাইটেট এয়ারের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

/এমএনএইচ/