মে দিবসে গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি ৬ আহ্বান

মহান মে দিবসে ‘গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন’  নামে একটি সংগঠন গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি ৬টি আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনটির আহ্বান হচ্ছে— ১. সকল শিল্প-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম-বিষয়ক ধারা স্থগিতের সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। ২. বিশ রোজার আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি-বোনাসসহ সকল পাওনাদি পরিশোধ করতে হবে। ৩. শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৪. করোনা-লকডাউন চলাকালে শ্রমিকদের ফ্রি টেস্ট, ভ্যাকসিনসহ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ৫. শ্রমিকদের জন্য সেনাবাহিনীর রেটে পূর্ণ-রেশনিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।

গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির  প্রধান তাসলিমা আখতার, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশের সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এএএম ফয়েজ হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক বিপ্লব ভট্টাচার্য, গার্মেন্টস শ্রমিক সভার অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা তুলসী দাস এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন—

‘আগামী পহেলা মে  উদযাপিত হবে ১৩৫তম মহান মে দিবস। এ বছর করোনা মহামারিজনিত দুর্যোগকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ‘সঙ্গনিরোধ’ বজায় রাখতে শ্রমিক শ্রেণি বিগত বছরের মতো এ দিবসটি উদযাপন করতে পারছে না। অথচ লকডাউন চলাকালীন সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কল-কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ কর্মস্থলে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। আমরা দেখছি, মে দিবসের ইতিহাস রচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তখনকার শ্রমিক শ্রেণির দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার যে চিত্র প্রতীয়মান হয়েছিল, আজকের প্রেক্ষাপটেও শ্রমিক শ্রেণি সেই নির্মম শোষণ-পীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত খাটুনি, কম মজুরি ও বিভিন্নভাবে হয়রানি-নির্যাতন চালিয়ে মালিক শ্রেণি আমাদের শ্রমিক জীবনকে অস্থির করে তুলছে।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘মহান মে দিবসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের অধিকার অর্জিত হওয়ার পরেও তা আমাদের দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এখনও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদেরকে নানা অজুহাতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয়। যেখানে শ্রমিকদের জীবনীশক্তি ও উৎপাদন সক্ষমতা রক্ষার জন্য ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন করা জরুরি, সেখানে উল্টো সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩২৪ ধারার ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই প্রজ্ঞাপনে ১৭ এপ্রিল ২০২১ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম ভাতা সংক্রান্ত ধারার (১০০, ১০২, ১০৫) প্রয়োগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর ফলে শ্রমিকরা আগের থেকে আরও বেশি করে শোষণ-বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হবেন। বর্তমান করোনাকালে এই ঘোষণা শ্রমিকদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপত্তাহীন করে তুলবে।’

নেতারা অবিলম্বে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম-বিষয়ক ধারা স্থগিতের সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিরের আহ্বান জানান।